বাবুল চিশতীর ভাইয়ের কর্মচারীর ‘কোম্পানিতে’ গেছে ৭০ কোটির বেশি

ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) লোপাট অর্থের মধ্যে ৭০ কোটি টাকার বেশি ব্যাংকটির পরিচালক মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী তার ভাইয়ের কর্মচারীদের দিয়ে খোলা কোম্পানিতে ঋণ হিসেবে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন বলে দুদকের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2019, 02:41 PM
Updated : 13 Oct 2019, 02:54 PM

অনুসন্ধান প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ব্যাংকটির অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকিং নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের ভাইকে অর্থ আত্মসাতে সহায়তা করেছেন। ভাইয়ের মাধ্যমে তিনি নিজেই সুবিধাভোগী ছিলেন।

ভুয়া ওই দুই প্রতিষ্ঠানে মোট ৭০ কোটি ৩১ লাখ ৮৮ হাজার ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাবুল চিশতী, তার ভাই দি ওয়েল টেক্স লিমিটেডের এমডি মাজেদুল হক ওরফে শামীম চিশতী, তার কর্মচারী মো. আবদুল ওয়াদুদ ওরফে কামরুল (শাবাবা অ্যাপারেলসের মালিক) এবং রাশেদ আলীরও (এডিএম ডাইং অ্যান্ড ওয়াশিংয়ের মালিক) মামলার হচ্ছে।

দুদকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, অর্থ আত্মসাতের এই ঘটনাসহ ফারমার্স ব্যাংকের আরও অর্থ আত্মসাত মিলিয়ে ওই চারজনসহ মোট আটজনকে আসামি করে মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুদক।

তাদের বিরুদ্ধে মোট ৮৮ কোটি ১৬ লাখ ১৭ হাজার টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হচ্ছে, যা সুদসহ ১১৪ কোটি ৩৪ লাখ ৩০ হাজার দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মাহবুবুল হক চিশতীর ভাই মাজেদুল হক চিশতী তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আবদুল ওয়াদুদকে মালিক সাজিয়ে শাবাবা অ্যাপারেলস নামের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। প্রতিষ্ঠানটি ফারমার্স ব্যাংক থেকে ১৫ কোটি ২৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ফান্ডেড ঋণ সুবিধা নেয়। এছাড়া ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপকের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নন-ফান্ডেড ১৫ কোটি টাকা সুবিধার পরিবর্তে ৩৯ কোটি ৯ লাখ ৬ হাজার টাকার ঋণসুবিধা দেওয়া হয়, যা সুদাসলে ৪৫ কোটি ৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা দাঁড়ায়। এ বিষয়ে ব্যাংকটির সাবেক এমডি কোনো ব্যবস্থা নেননি।

“একইভাবে মাজেদুল হক চিশতী আরেক কর্মচারী রাশেদ আলীকে মালিক সাজিয়ে এডিএম ডাইং নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। এর মাধ্যমে ১৭ কোটি টাকা ঋণসুবিধার পরিবর্তে ৫৫ কোটি ৫ লাখ ১১ হাজার টাকা ঋণ নেন।”

জালিয়াতির মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে বাবুল চিশতী, তার স্ত্রী-ছেলেসহ ব্যাংকটির বিভিন্ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এর আগে রাজধানীর গুলশান থানায় চারটি মামলা করে দুদক।

সর্বশেষ গত ২৯ এপ্রিল বন্ধকী সম্পত্তির মূল্য বেশি দেখানোসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংকটি থেকে ঋণ দেওয়ার অভিযোগে বাবুল চিশতীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

এছাড়া গত বছরের ১০ এপ্রিল মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে বাবুল চিশতীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে দুদক। আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে কমিশন।

গত বছরের ৮ অগাস্ট দায়ের করা আরেকটি মামলায় বাবুল চিশতীর বিরুদ্ধে ফারমার্স ব্যাংকের অর্থে প্রভাব খাটিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

এরপর একই বছরের ২৮ অক্টোবর একটি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ২৯ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া এবং সেই অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয় বাবুল চিশতীর বিরুদ্ধে। এ মামলায় তার সাথে আরও পাঁচজনকে আসামি করে দুদক।