তিনি বলেছেন, “আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরাও নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করবে সেটাই আমি আশা করি।”
রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “বন্যা, খরা, ঘুর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, অগ্নি নির্বাপনের মত দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি যাতে হ্রাস পায় সেজন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার ইতোমধ্যে তা নেওয়া হয়েছে, যা আন্তজার্তিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
“এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। অনেকে আমাদের কাছ থেকে জানতে চায়।”
বাংলাদেশে গ্লোবাল অ্যাডাপটেশন অফিস স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিশ্বে এখন আমরা শুধু উন্নয়নের রোল মডেল না, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলাতে বিশ্বে বাংলাদেশ রোল মডেল, সে সম্মান পেয়েছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ আমরা। আমাদের ভৌগলিক অবস্থানটাই এরকম। আর দুর্যোগের সাথেই আমাদের বসবাস করতে হবে।
“কিন্তু সেই বসবাসের ক্ষেত্রে আমাদের জীবন-জীবিকা যেন চলতে পারে, মানুষ যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়, মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।”
সেদিকে লক্ষ্য রেখেই বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদনে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
“আমরা গবেষণা শুরু করেছিলাম। যে গবেষণার মাধ্যমে লবণাক্ত, খরাসহিষ্ণু ধান উৎপাদন করেছি। জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধান উদ্ভাবন করেছি এবং সেটাকে কিভাবে আরও সহিষ্ণু করা যায় সে বিষয়ে গবেষণা চলছে।”
শেখ হাসিনা জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘূর্ণিঝড় থেকে জনগণের জানমাল রক্ষায় ১৭২টি সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ করেন। স্থানীয় লোকজন এর নাম দিয়েছিলে মুজিব কেল্লা।
“তারই আলোকে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। বর্তমানে প্রায় ৫৬ হাজার প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে আমাদের। তাছাড়া ৩২ হাজার নগর স্বেচ্ছাসেবক, ২৪ লক্ষ আনসার ভিডিপি, ১৭ লক্ষ স্কাউটস, ৪ লক্ষ বিএনসিসি, গার্লস গাইডের প্রায় ৪ লক্ষ সদস্য- তারাও এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। যেকোনো দুর্যোগের সময় তারা সকলে সেখানে উপস্থিত হয় এবং কাজ করে।”
“একটা সরকার যদি সচেতন না থাকে, সজাগ না থাকে তাহলে কত বড় ক্ষতি হতে পারে সেটা একানব্বই সালের ঘূর্ণিঝড়ে আমরা দেখেছি।”
“আমাদের সরকার ইতোমধ্যে ৩৭৮টি মুজিব কেল্লা নির্মাণ করেছে। আর উপকূলে ৩৮৬৮টি বহুমুখী সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে এবং আরও ১৬৫০টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করবার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সব সময় যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে পূর্বাভাস দেওয়া, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সেই লোকগুলোকে সাইক্লোন সেন্টারে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করি। দুর্যোগকালীন সময়ে করণীয় বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ ও সচেতন করা হয়। এরফলে এখন ঘূর্ণিঝড়ে মৃতের সংখ্যা একেবারে নাই।”
অনুষ্ঠানে নবনির্মিত ১০০টি ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং ১১৬০৪টি দুর্যোগসহনীয় বাড়ি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান ও মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব শাহ কামাল অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির জন্য সেরা ৮২ জন স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে তিনজনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন শেখ হাসিনা।
১৯৯৭ সালে দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী প্রণয়ন এবং ২০১০ সালে তা হালনাগাদ করা, ২০১২ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন প্রণয়ন, ২০১৫ সালে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (এনইওসি) প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরেন তিনি।
এছাড়া হেলিকপ্টারে করে পাহাড় ও দ্বীপ অঞ্চলে ‘ব্যাপক হারে’ বীজ ছড়িয়ে বনাঞ্চল সৃষ্টির কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রাকৃতিক দুর্যোগে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আপতকালীন সময়ে গৃহস্থালিতে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য হাউজহোল্ড সাইলো সরবরাহ করে যাচ্ছি। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত আমরা ৩ লাখ ২৮ হাজার পরিবারে সাইলো বিতরণ করেছি। মোট আমরা ৫ লক্ষ পরিবারকে এই সাইলো দেব।
“এছাড়া বিভিন্ন জেলায় আমরা ৫ লাখ মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন ৮টি সাইলো কমপ্লেক্স নির্মাণ করছি। দুই বছর যাতে খাদ্য সংরক্ষণ করা যায় সে ধরনের খাদ্য গুদামও আমরা নির্মাণ করে যাচ্ছি।”
বাংলাদেশ নামের ব-দ্বীপকে টিকিয়ে রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যাতে এটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়নের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
“সদুরপ্রসারি, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছি। আগামী প্রজন্মের জীবন যেন সুন্দর হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের এ পরিকল্পনা।”
নদী ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে আমরা মানুষকে দুর্যোগসহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য আছে বাংলাদেশে একটা গৃহহারা মানুষও থাকবে না।”
বাংলাদেশ যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে সেখান থেকেও দুর্যোগকালীন সময়ে সুবিধা নেওয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা।