আবরার হত্যা: অনিক সরকারের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

আবরার ফাহাদ হত্যামামলায় রিমান্ডে থাকা বুয়েটছাত্র অনিক সরকার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2019, 10:41 AM
Updated : 13 Oct 2019, 01:04 PM

এদিকে গ্রেপ্তার আরেক আসামি মাজেদুর রহমান নওরোজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।

হত্যামামলার আরেক আসামিকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ; এ নিয়ে ছয় দিনে মোট ১৯ জন গ্রেপ্তার হলেন।

গত ৬ জুন আবরার খুন হওয়ার পরপরই যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের একজন অনিক। গ্রেপ্তারের পর তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ।

শনিবার অনিককে ঢাকার আদালতে নিয়ে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার আবেদন জানায় মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা ডিবি।

বুয়েট ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পঞ্চদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী। আবরারের বাবার করা মামলায় আসামি হওয়ার পর তাকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ফজলুর রহমান জানিয়েছেন, অনিক সরকার ১৬৪ ধারায় জবাববন্দি দিয়েছেন। মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম তার খাস কামরায় আসামির জবানবন্দি নেন।

এই হত্যামামলায় এর আগে বুয়েটছাত্র মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন ও ইফতি মোশাররফ সকাল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

গণমাধ্যমে খবর এসেছে, আবরারকে পেটাতে পেটাতে অনিক একটি ক্রিকেট স্ট্যাম্প ভেঙে ফেলেছিলেন বলে ইফতি তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন।

অনিক জবানবন্দিতে কী বলেছেন- জানতে চাইলে উপ-কমিশনার ফজলুর বলেন, “১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। কী বলেছে, সেটা জানি না।”

জবানবন্দি নেওয়ার পর অনিককে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

নাম শুধরে দিলেন মাজেদ

আবরার হত্যাকাণ্ডের পর আসামির তালিকায় থাকা মাজেদুল ইসলামকে শুক্রবার সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করে শনিবার আদালতে হাজির করা হলে তিনি জানান, তার নামটি ভুল বলেছে পুলিশ।

এই বুয়েটছাত্র সাংবাদিকদের বলেন, “আমার নাম মাজেদুর রহমান নওরোজ। পুলিশ ভুল করে মাজেদুল ইসলাম লিখেছে।”

আবরারের বাবা ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় যে মামলাটি করেন, সেখানে আসামির তালিকায় ৮ নম্বরে মাজেদুল ইসলামের নাম রয়েছে।

বুয়েটের শেরে বাংলা হল ছাত্রলীগের কর্মী ও ম্যাটারিয়াল অ্যান্ড ম্যাটার্লজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাজেদকে শনিবার গ্রেপ্তারের সময়ও পুলিশ নাম ‘মাজেদুল’ই বলেছিল।

আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এই বুয়েটছাত্র বলেন, “সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আমাকে দেখা গেছে কি না, জানি না। আহত অবস্থায় আবরারকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার দলে আমিও ছিলাম।”

ওই সময় বুয়েট ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপ সম্পাদক অমিত সাহা হলে ছিলেন না বলে দাবি করেন মাজেদ।

মামলার এজাহারে নাম না থাকলেও অমিত ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

মাজেদকেও ১০ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়েছিল ডিবি। তাদের আবেদনের শুনানি করে পাঁচ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসী।

আদালতে মাজেদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

আসামি মোয়াজ গ্রেপ্তার

আবরার ফাহাদ হত্যামামলার এজাহারভুক্ত আসামি বুয়েটছাত্র মোয়াজ আবু হুরাইরাকে শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সকাল ১১টার দিকে ঢাকার উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এনিয়ে এই হত্যার ঘটনায় এজাহারভুক্ত ১৫ জনসহ ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হল।

অমিত সাহাসহ চারজনের নাম আবরারের বাবার করা মামলায় না থাকলেও হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান মাসুদুর।

মোয়াজ বুয়েটের সিএসই বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র।

আবরার ছিলেন তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

গত ৬ অক্টোবর রাতে শেরে বাংলা হলের একটি কক্ষে আবরারকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। 

হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে যাদের নাম এসেছে, তারা সবাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। ছাত্রলীগ ইতোমধ্যে ১১ জনকে বহিষ্কার করেছে।