আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর টানা আন্দোলনে বুয়েটের এবারের ভর্তি পরীক্ষা অনিশ্চয়তায় পড়ে; শুক্রবার উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে আশ্বাস পেলেও কর্মসূচি থেকে পিছু হটছিলেন না আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারী বিভিন্ন দাবি মেনে বুয়েট কর্তৃপক্ষ শনিবার সকালে বিজ্ঞপ্তি জারির পরও ক্যাম্পাসে মিছিল নিয়ে বেরিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।
দুপুরে ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এক সমাবেশ থেকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আগামী রোব ও সোমবার কোনো কর্মসূচি না রাখার সিদ্ধান্ত জানানো হয় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে।
আন্দোলনকারীদের এক প্রতিনিধি সাংবাদিকদের বলেন, “১৩ ও ১৪ তারিখ ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে আন্দোলন শিথিল করছি। ভর্তিচ্ছু ১২ হাজার পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের এই সময় সর্বোচ্চ সহায়তা দেব।”
আন্দোলনকারীরা সোমবার বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিও জানিয়েছে।
আন্দোলন থাকবে কি না- সাংবাদিকদের প্রশ্নে ওই প্রতিনিধি বলেন, “আমাদের আন্দোলন যেহেতু ১০ দফার ভিত্তিতে শুরু হয়েছে, সেহেতু আমরা আমাদের আন্দোলন তুলে নিচ্ছি না। শুধু দুই দিনের জন্য শিথিল করছি।”
অধিকাংশ দাবি পূরণের আশ্বাসের পরও আন্দোলনে থাকার কারণ ব্যাখ্যা করে এই বুয়েট শিক্ষার্থী বলেন, দাবিগুলো বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত তারা আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না।
শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শিথিলের ঘোষণা দেওয়ার পর বুয়েট কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত সময়েই হবে বলে জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের সকল অনুষদের, সকল বিভাগের স্নাতক শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১৪ অক্টোবর ২০১৯ রোজ সোমবার সকাল ৯.০০ ঘটিকায় যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে। যানজট এড়াতে সকল পরীক্ষার্থীকে সকাল ৮.০০ ঘটিকার মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকার জন্য উপদেশ দেয়া হল।”
তড়িৎ কৌশল বিভাগের ছাত্র শেরে বাংলা হলের আবরারকে গত ৬ অক্টোবর হলের একটি কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালায় ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। তাতে তার মৃত্যু ঘটলে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থী ব্যানারে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরতদের দাবির প্রতি পরে সমর্থন জানায় বুয়েট শিক্ষক সমিতি এবং সাবেক ছাত্রদের সংগঠন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনও।
আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বুয়েটে সংগঠনের ১১ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করে; পুলিশ ঘটনার দিনই পুলিশ গ্রেপ্তার করে ১০ জনকে।
আন্দোলনের পঞ্চম দিন শুক্রবার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেন উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল। আবরার হত্যাকাণ্ডের পর তা ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা ছিল শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের।
শিক্ষার্থীরা প্রথমে সাত দফা নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন, পরে তা ১০ দফায় গিয়ে দাঁড়ায়। শুক্রবারের সভায় তা মানার আশ্বাস দেন উপাচার্য। তিনি ক্ষমা চেয়ে ভর্তি পরীক্ষাটি শেষ করতে দেওয়ার মিনতি জানালেও স্পষ্ট সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় ওই সভা।
এরপর শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচটি বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়।
যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে বুয়েট >> বুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে। >> আবরার হত্যাকাণ্ডের ১৯ আসামিকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হল, তদন্ত সাপেক্ষে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে। >> মামলার সব ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে। >> অবৈধভাবে যারা হলে থাকছে, তা খালি করা হবে; কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে র্যাগিংয়ের অভিযোগ এলে ডিসিপ্লিনারি কমিটি দ্রুত শাস্তি দেবে। >> নির্যাতনের ঘটনা সংক্রান্ত অভিযোগ জমা দিতে একটি ওয়েব পোর্টাল তৈরি করা হবে। শুক্রবার সভার পর শিক্ষার্থীরা যে পাঁচটি শর্ত দিয়েছিল, তার মধ্যে এই বিষয়গুলোই ছিল। শিক্ষার্থীদের পাঁচ শর্ত >> আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে এখনই সাময়িক বহিষ্কার করতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট হবে, তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে মর্মে বুয়েট প্রশাসন থেকে নোটিস জারি করতে হবে। >> আবরার হত্যা মামলার সব খরচ বুয়েট প্রশাসন বহন করবে এবং তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকবে, সেটাও নোটিসে লেখা থাকবে। >> বুয়েটে সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সকল হল থেকে অবৈধ ছাত্র উৎখাত করতে হবে। অবৈধভাবে হলের সিট দখলকারীদের উৎখাত করতে হবে। সাংগঠনিক ছাত্র সংগঠনগুলোর অফিস রুম সিলগালা করতে হবে। সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পর ভবিষ্যতে কেউ যদি এ রকম সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িত হয় কিংবা কোনো রকম ছাত্র নির্যাতনে জড়িত হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নেবে- তা বিস্তারিত জানিয়ে নোটিস জারি করতে হবে। পরবর্তীতে এটি যে অর্ডিন্যান্সে অন্তর্ভুক্ত থাকবে, তা নোটিসে উল্লেখ থাকতে হবে। পাশাপাশি, এ ধরনের কার্যক্রম তদারকির জন্য একটি কমিটি করতে হবে এবং কমিটি গঠনের বিষয়টিও নোটিসে উল্লেখ করতে হবে। >> বুয়েটে পূর্বে ঘটে যাওয়া সকল ছাত্র নির্যাতন, হয়রানি, র্যাগিংয়ের ঘটনা এবং ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা প্রকাশের জন্য বিআইআইএস অ্যাকাউন্টে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম থাকতে হবে। বিষয়টি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শাস্তি বিধানের জন্য একটি কমিটি থাকতে হবে। বিষয়টি নোটিসের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। >> প্রত্যেক হলের সকল ফ্লোরের দুই পাশে সিসি ক্যামেরা যুক্ত করতে হবে এবং এই সিসিটিভি ফুটেজ সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে- এই মর্মে নোটিস আসতে হবে। |
তারপরও কেন আন্দোলন?
এসব দাবি পূরণের পরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত থাকায় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি মেনে নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানালেও দাবি বাস্তবায়ন দেখতে চাচ্ছেন বলে জানালেন আন্দোলনরতরা।
আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী, বিচার বিভাগ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। বিচার ঠিকঠাক চলছে। আসামিরা গ্রেপ্তার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের আন্দোলন এখনও ১০ দফা দাবি আদায়ের ব্যাপারে। কিন্তু যে ১২ হাজার ভর্তি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা আসবে, কেবল তাদের ভোগান্তির কথা ভেবেই সেজন্য আমরা ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য ৫টি পয়েন্টে একমত হয়েছিলাম। অর্থাৎ এই ৫টি পয়েন্ট পূরণ হলেই আমরা ধরে নেব, ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে।
“এই ৫টি পয়েন্ট যদি মেনে নেওয়া হয়, তার মানে এই নয় যে আমাদের আন্দোলন থেমে যাচ্ছে, আমাদের আন্দোলন আগের ১০ দফা দাবিতেই হচ্ছে। এই পাঁচটি পয়েন্ট আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে রাখছি। কারণ আপনারা যদি আমাদের ১০ দফা দাবি দেখেন, তাহলে ১ নম্বর, ৪ নম্বর এবং ৫ নম্বর এই তিনটি দাবি হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপর।
“ওদের বিচার কী হবে, চার্জশিট কবে দেওয়া হবে, এই বিষয়গুলো সম্পূর্ণরূপে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপর নির্ভরশীল। আমরা চাই, বিচার দ্রুত হোক। তবে আমরা চাই না এই বিষয়ে কোনো চাপ তৈরি করতে। কারণ তাড়াহুড়ো করে ভুল বিচার হোক, সেটা আমরা চাই না।”
শিক্ষার্থীদের দেওয়া ৫টি শর্তের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে যা যা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে খবর এসেছে তিতুমীর হলে সিসিটিভি ক্যামেরা কিনে আনা হয়েছে এবং সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। আহসান উল্লাহ হলে সিসিটিভি ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং লাগানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বেশ কিছু সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল, যা অকার্যকর ও নষ্ট, সেগুলো রিপ্লেসমেন্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
“আমরা দেখতে চাচ্ছিলাম, হলগুলো থেকে অবৈধ ছাত্রদের উৎখাত করা। ইতোমধ্যে নজরুল ইসলাম হলে, আহসান উল্লাহ হলে, তিতুমীর হলে যারা অবৈধ ছাত্র ছিল, তাদের উৎখাতের কাজ শুরু হয়ে গেছে।
“আমাদের আরেকটি পয়েন্ট ছিল বিআইআইএস অ্যাকাউন্টে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম থাকতে হবে যেখানে কিনা সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের উপর হওয়া নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে পারে। আমরা এটির বাস্তবায়ন চেয়েছিলাম গতকাল। আজকে আমরা বুয়েটের আইআইসিটি ডিভিশনে গিয়ে জানতে পারি যে এই কাজটি করা বেশ সময় সাপেক্ষ। তারা বলেছেন এক সপ্তাহ সময় লাগবে। কিন্তু তারা সদিচ্ছার প্রমাণস্বরূপ একটি কমিটি দিয়েছেন এবং এই বিষয়ে তারা মিটিং শুরু করেছে।”
দাবির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে দেখে শিক্ষকদের উপর ‘আশ্বস্ত’ হওয়ার কথা জানালেন আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি; সেই সঙ্গে আশা ভঙ্গের আশাও ফুটল তার কথায়।
তিনি বলেন, “গত তিন বছরে বুয়েটে বিভিন্ন দাবিতে বিভিন্নভাবে ছাত্ররা আন্দোলন করেছে এবং প্রতিবারেই প্রশাসনের কাছে আমরা আশ্বাস পেয়েছি এবং এই কারণেই প্রশাসনের উপর আমাদের মিসট্রাস্ট তৈরি হয়েছে। স্যারদের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে কাইন্ডলি এবারও আমাদের আশ্বাস দিয়ে ফিরিয়ে দিবেন না। আমরা আপনাদের বিশ্বাস করতে চাই, কাইন্ডলি আমাদের বিশ্বাস ভেঙে দেবেন না। আপনারা আমাদের দাবি-দাওয়া মেনে নিন।”
সব দাবি বাস্তবায়নের আগে আন্দোলন থেকে পিছু হটবেন না বলে সিদ্ধান্ত ছিল বলে জানান এই বুয়েটছাত্র।
তিনি বলেন, “আমাদের কথা ছিল, দাবি বাস্তবায়ন হলে কেবল আমরা মাঠ ছাড়ব। কিন্তু যেহেতু এখানে ১২ হাজার ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ব্যাপারটি চলে এসেছে, তাই তাদের ভোগান্তির কথা ভেবে এবং যেহেতু আমাদের দাবি বাস্তবায়ন দৃশ্যমান শুরু হয়ে গেছে, সেহেতু এখন আমরা স্যারদের উপর আস্থা রাখছি।”
দুদিন পর আন্দোলনের কর্মসূচি কী হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে, তা দুই দিনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জানাব।”
শিক্ষার্থীদের ১০ দফা
>> আবরার ফাহাদের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সিসিটিভি ফুটেজ ও জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুসারে শনাক্ত খুনিদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
>> সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জড়িতদের শনাক্ত করে শুক্রবার বিকাল ৫টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করতে হবে।
>> মামলার সব খরচ এবং আবরারের পরিবারের ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে। শুক্রবার বিকাল ৫টার মধ্যে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক নোটিস জারি করতে হবে।
>> দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে স্বল্পতম সময়ে আবরার হত্যা মামলার নিষ্পত্তি করার জন্য বুয়েট প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বুয়েট প্রশাসনকে সক্রিয় থেকে সমস্ত প্রক্রিয়া নিয়ামত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নিয়মিত ছাত্রদের তথ্য দিতে হবে।
>> আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্রের কপি অবিলম্বে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করতে হবে।
>> বুয়েটে ‘সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি’ নিষিদ্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে বুয়েটে হলে হলে ‘ত্রাসের রাজনীতি’ কায়েম করে রাখা হয়েছে। জুনিয়র ব্যাচকে সবসময় ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে রাজনৈতিক মিছিল মিটিংয়ে যুক্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে কোনো সময় যে কোনো হল থেকে সাধারণ ছাত্রদের হল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে হলে হলে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। রাজনৈতিক সংগঠনের এহেন কর্মকাণ্ডে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ক্ষুব্ধ। তাই ১৫ অক্টোবরের মধ্যে বুয়েটে সকল রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
>> বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কেন ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও ঘটনাস্থলে যাননি এবং ৩৮ ঘণ্টা পরে উপস্থিত হয়ে কেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেছেন, কোন তিনি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে স্থান ত্যাগ করেছেন, তাকে ক্যাম্পাসে এসে বুধবার দুপুর ২টার মধ্যে জবাবদিহি করতে হবে।
>> আবাসিক হলগুলোতে র্যাগের নামে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর সকল প্রকার শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে এবং এ ধরনের সন্ত্রাসে জড়িত সকলের ছাত্রত্ব প্রশাসনকে বাতিল করতে হবে। একই সাথে আহসানউল্লাহ হল এবং সোহরাওয়ার্দী হলের পূর্বের ঘটনাগুলোতে জড়িত সকলের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে।
>> আগে ঘটা এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ এবং পরবর্তীতে তথ্য প্রকাশের জন্য একটি কমন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কোনো ওয়েবসাইট বা ফর্ম থাকতে হবে এবং নিয়মিত প্রকাশিত ঘটনা রিভিউ করে দ্রুততম সময়ে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বুয়েটের বিআইআইএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে। ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রদর্শন করতে হবে এবং পরবর্তী ১ মাসের মধ্যে কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে সবগুলো হলের প্রত্যেক ফ্লোরের সবগুলা উইংয়ের দুই পাশে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে।
>> রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্র উৎখাতের ব্যাপারে নীরব থাকা এবং ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় শেরে বাংলা হলের প্রভাস্টকে ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।
আরও খবর