জিকে শামীমের কোম্পানির অধীনের প্রকল্প নিয়ে নির্দেশনা

র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়ে মুদ্রা পাচার আইনসহ একাধিক মামলায় কারাবন্দি জিকে শামীমের ঠিকাদারি কোম্পানির অধীনে একক বা যৌথভাবে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2019, 02:21 PM
Updated : 10 Oct 2019, 02:21 PM

মেসার্স জিকে বিল্ডার্সের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরকে চিঠিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এর আগে জানিয়েছিলেন, জিকে বিল্ডার্স সরকারের ৫৩টি ভবন নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করছে, যার মধ্যে ১৩টিতে তার কোম্পানি এককভাবে কাজ করছে, বাকিগুলো যৌথভাবে করছে।

ক্যাসিনো বন্ধে অভিযানের মধ্যে প্রভাবশালী ঠিকাদার জিকে শামীমকে গত ২০ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর তার ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়।

বুধবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে গৃহায়নমন্ত্রী বলেছিলেন, “জিকে শামীমের অনেকগুলো প্রকল্প এখন চলমান। সে প্রকল্পের কিছু কিছু জায়গায় তারা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে- এই অজুহাতে যে, তাদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে, তাদের টাকা-পয়সা নাই, কাজ করতে পারছেন না।

“আমরা তাদেরকে নোটিস দেব। যদি তারা এগিয়ে না আসেন। অসমাপ্ত কাজ পরিমাপ করে তার জন্য আবার টেন্ডার দেওয়া হবে।”

এর মধ্যে বুঝিয়ে দেওয়া কাজগুলোর মান পরীক্ষা করে যদি দেখা যায়, তা দরপত্রের শর্ত পূরণ করছে না, তাহলে সেসব সব কাজ গ্রহণ করা হবে না বলে জানান তিনি।

প্রকল্পে স্বচ্ছতা আনতে ১৪ অনুশাসন

প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে অধীন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর জন্য ১৪টি অনুশাসন দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

এই অনুশাসনগুলো অনুসরণের নির্দেশনা দিয়ে বুধবার মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র জারি করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় মন্ত্রণালয়।

অবকাঠামো বিষয়ক উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ গণপূর্ত অধিদপ্তরে দুর্নীতির ১০টি উৎস চিহ্নিত করে একদিন আগেই প্রতিবেদন দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। তার পরদিনই অনুশাসন জারি হল।

অনুশাসনের মধ্যে রয়েছে- নতুন প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে যোগ্যতাসম্পন্ন তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বিস্তারিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অর্থাৎ পরিবেশগত, সামাজিক ও কারিগরী প্রভাব এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম আবশ্যিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় দলিলপত্র সংযুক্ত করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে।

স্থাপনা নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পের ক্ষেত্রে কারিগরি পরীক্ষা যেমন- মাটি পরীক্ষা, সাইট নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্যাদি ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। বিশেষ কারণ ছাড়া চলমান প্রকল্পের ব্যয়, মেয়াদ বৃদ্ধি, আন্তঃঅঙ্গ সমন্বয় এবং প্রকল্প সংশোধন করা যাবে না। জরুরি প্রয়োজন হলে মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্ববান কর্মকর্তার মাধ্যমে সরেজমিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রকল্পের ড্রয়িং ও ডিজাইন চূড়ান্ত করে মোট ব্যয় প্রাক্কলনের পর প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াকরণ করতে হবে। এর আগে কোন অবস্থাতেই ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো যাবে না।

প্রকল্পের আইটেমের পরিমাণ এবং আইটেম অনুযায়ী প্রাক্কলিত ব্যয়ের সঠিকতা ও যথার্থতা সংস্থা প্রধান এবং সংস্থা প্রধানের মনোনীত ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে যৌথভাবে প্রত্যয়িত হতে হবে। প্রাক্কলনের সাথে রেট সিডিউল/বাজার মূল্যের অসামাঞ্জস্যতা থাকলে সংস্থা প্রধানের মনোনীত কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া যাবে।

ভেরিয়েশন, পুনঃকার্যাদেশ, অতিরিক্ত কার্যাদেশসহ এ ধরণের কার্যক্রম নিরুৎসাহিত করতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষে যৌক্তিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ভেরিয়েশন, পুনঃকার্যাদেশ, অতিরিক্ত কার্যাদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয় নীতি যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবে প্রত্যয়ন সংযুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক।

বিদ্যমান বিধি-বিধান অনুযায়ী গঠিত অধিদফতর/সংস্থার পণ্য সংশ্লিষ্ট সেবা, কার্য ক্রয় সংক্রান্ত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি নিয়মিতভাবে পুর্নগঠন করতে হবে। প্রকল্পের আওতাভুক্ত কাজ/ক্রয়ের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে আবশ্যই মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে।

প্রতিটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকরা সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলাকায় সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান করবেন এবং সংস্থা প্রধানরা বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। সংস্থা প্রধানসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের সিনিয়র কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে প্রকল্প এলাকা আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক বা আকস্মিকভাবে পরিদর্শন করবেন। চিহ্নিত সুনির্দিষ্ট অনিয়মসহ মন্ত্রণালয় বা সংস্থায় প্রতিবেদন পাঠাবেন।

ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষকে যোগ্যতাসম্পন্ন সরবরাহকারী বা ঠিকাদারের তালিকা সংরক্ষণ করতে হবে। প্রকল্প সাইটে সাইট অর্ডার বুকসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের সকল নথি/ডকুমেন্ট যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রকল্প সাইটের দৃশ্যমান স্থানে প্রকল্পের সমস্ত তথ্য সম্বলিত সাইন বোর্ড স্থাপন করতে হবে।

প্রকল্পের আওতায় নির্মিত স্থাপনার উপকরণের গুণগত মান উপযুক্ত ল্যাবরেটরির মাধ্যমে নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে বলেও  অনুশাসনে উল্লেখ করা হয়।