আবরার হত্যার অভিযোগপত্র শিগগিরই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র ‘শিগগিরই’ দাখিল করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2019, 11:10 AM
Updated : 10 Oct 2019, 11:36 AM

তিনি বলেছেন, “আমরা আশা করি খুব শিগগির, খুব স্বল্পতম সময়ে মধ্যে এই মামলার পূর্ণাঙ্গ চার্জশিট প্রদান করতে পারব। আমাদের পুলিশ এ কাজটি করছে, যাতে চার্জশিট নিখুঁত হয়, সমস্ত কিছু যেন নির্ভুল হয়।”

আবরারের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ দশ দফা দাবিতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ মামলার অভিযোগপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করার দাবিও রয়েছে শিক্ষার্থীদের ১০ দফার মধ্যে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কেন এই হত্যাকাণ্ড, সবগুলোরই এখন তদন্ত হবে। আপনারা ইতোমধ্যে শুনেছেন, যারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল, কিংবা যারা এই হত্যাকাণ্ডের.... আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করেছি।

"তারপরও আরও যদি কেউ জড়িত থাকেন, সবাইকে আমরা ধরব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত শক্ত ভাষায় এ বিষয়ে কথা বলেছেন।"

তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ ছিলেন শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র। গত রোববার রাতে তাকে সেখান থেকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট ছাত্রলীগের কয়েকজন। 

ফেইসবুকে মন্তব্যের সূত্র ধরে শিবির সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আবরারকে লাঠি ও ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে ইতোমধ্যে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।

বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই যে মাতাল অবস্থায় আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তা উঠে এসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নিজস্ব তদন্তেও।

এই প্রেক্ষাপটে বুয়েট ছাত্রলীগের ১১ জনকে ইতোমধ্যে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘মাস্তানিতে’ জড়িতদের ধরতে ‘কে কোন দলের তা না দেখে’ সারা দেশের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে তল্লাশি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সেই প্রসঙ্গ টেনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, যারা দুষ্কৃতকারী, যারা এই সমস্ত কাণ্ডকারখানা ঘটায়, রাজনীতির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই, সে বিষয়ে আমরা কঠিন এবং কঠোরতম।

“পাশাপাশি তিনি এ কথাও বলেছেন, কোনো ইনফরমেশন কিংবা কোনো কিছু যদি থাকে কিংবা নাও থাকে। তাহলেও যেন প্রত্যেক ছাত্রাবাস তল্লাশির আওতায় নিয়ে আসা হয়। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারেই কাজ করছি।”

আবরার হত্যায় জড়িতদের পুলিশ ‘যথাসময়ে’ গ্রেপ্তার করতে পেরেছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “আমরা আশা করি, বিচারের কাজটা যাতে দ্রুততার সঙ্গে শেষ হয়। একটা নিখুঁত চার্জশিট দিয়ে সেটা আমরা সহজতর করে দিচ্ছি।"

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী হলগুলোতে কবে থেকে তল্লাশি চালানো হবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করে নেব, কোথায় কীভাবে...।

“আরো কিছু ফর্মালিটিজ পালন করতে হয়, আপনারা জানেন… ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে...। তবে আমরা কলেজগুলোতেও দেখব।

“কলেজগুলোর ছাত্রাবাসগুলোতে যদি এরকম উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে, কিংবা আইন ভঙ্গ করে, কিংবা ...। এ বিষয়ে আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছেন।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ‘টর্চার সেল’ ও ‘র‌্যাগিং’ নিয়ে এক পশ্নে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “আমার মনে হয় বেশি রকম এ কালচারটা রয়েছে বুয়েটে। বুয়েটে আমরা এটা বেশি দেখেছি। কিছুটা দেখেছি জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটিতে, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে বেশি নেই আমার মনে হয়।… এ কালচার থেকে  কীভাবে বেরিয়ে আসবেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা উচিত বলে আমি মনে করি।”

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ‘শুদ্ধি অভিযানে’ ভাটা পড়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “কোনো ভাটা পড়েনি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গতকাল সুন্দরভাবে এক্সপ্লেইন করে দিয়েছেন। আমার মনে হয় এরপর আমার আর কিছু বলার নেই।”

শুদ্ধি অভিযান সব সময়ই চালাতে হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ইদানিংকালে যেগুলো হচ্ছে, তারা মাত্রার বাইরে চলে গিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সে ব্যাপারে অ্যাকশন নিচ্ছেন এবং নির্দেশনা দিচ্ছেন।”