শুক্রবারের মধ্যে দাবি না মানলে বুয়েটে তালা

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আন্দোলন করে আসা শিক্ষার্থীরা তাদের দশ দফা পূরণে উপাচার্যকে শুক্রবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন; তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে বলে তারা জানিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2019, 07:06 AM
Updated : 10 Oct 2019, 07:08 AM

আবরার হত্যাকাণ্ডের পর বৃহস্পতিবার টানা চতুর্থ দিনের মতো ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করছে শিক্ষার্থীরা।

গত রোববার রাতে শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পিটুনিতে তড়িৎ কৌশল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরারের মৃত্যুর পর ৩০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বুয়েট উপাচার্য সাইফুল ইসলাম আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে আসেননি। পরে যখন আসেন, তখন তিনি আন্দোলনরতদের সঙ্গে ‘বিরূপ আচরণ’ করেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, “তিনি (উপাচার্য) আমাদের মধ্যে এলেও আমাদের কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।”

“আমরা আশা করব, ভিসি স্যার কাল (শুক্রবার) দুইটার মধ্যে আমাদের মধ্যে আসবেন, তিনি সবার সঙ্গে কথা বলবেন। যদি তা না হয়, তাহলে বুয়েটের সব বিল্ডিংয়ে তালা ঝুলবে।”

গত মঙ্গলবার উপাচার্য সাইফুল ইসলাম আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে এসে ‘নীতিগতভাবে’ তাদের দাবির সঙ্গে একমত জানালেও তখনকার আট দফা মেনে নেওয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা না দিলে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা বন্ধসহ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন আন্দোলনরতরা।

পরদিন (বুধবার) শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি বাড়িয়ে ১০টি করেন। এগুলোর মধ্যে একটি ছিল ১১ অক্টোবরের মধ্যে শেরে বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের বেঁধে দেওয়া সময়ের আগে ওইদিনই পদ ছাড়েন প্রাধ্যক্ষ জাফর ইকবাল খান।

কিন্তু বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাননি, তাই তাদের দাবি দশটিই থাকছে।

রোববার গভীর রাতে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরারের লাশ উদ্ধারের পর থেকে উত্তাল বুয়েট।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সবশেষ বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেপ্তার হয়েছেন অন্যতম সন্দেহভাজন ও বুয়েট ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা। এ পর্যন্ত যে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। 

এদিকে আগামী ১৪ অক্টোবর বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এই উত্তাল পরিস্থিতিতে পরীক্ষা আদৌ হবে কিনা এ বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ ব্যাপারে তারা দ্রুত কাউন্সিলের বিবৃতির আশা করছেন।

শিক্ষার্থীদের ১০ দফা

>> আবরার ফাহাদের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সিসিটিভি ফুটেজ ও জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুসারে শনাক্ত খুনিদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

>> সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জড়িতদের শনাক্ত করে শুক্রবার বিকাল ৫টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করতে হবে।

>> মামলার সব খরচ এবং আবরারের পরিবারের ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে। শুক্রবার বিকাল ৫টার মধ্যে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক নোটিস জারি করতে হবে।

>> দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে স্বল্পতম সময়ে আবরার হত্যা মামলার নিষ্পত্তি করার জন্য বুয়েট প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বুয়েট প্রশাসনকে সক্রিয় থেকে সমস্ত প্রক্রিয়া নিয়ামত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নিয়মিত ছাত্রদের তথ্য দিতে হবে।

>> আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্রের কপি অবিলম্বে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করতে হবে।

>> বুয়েটে ‘সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি’ নিষিদ্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে বুয়েটে হলে হলে ‘ত্রাসের রাজনীতি’ কায়েম করে রাখা হয়েছে। জুনিয়র ব্যাচকে সবসময় ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে রাজনৈতিক মিছিল মিটিংয়ে যুক্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে কোনো সময় যে কোনো হল থেকে সাধারণ ছাত্রদের হল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে হলে হলে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। রাজনৈতিক সংগঠনের এহেন কর্মকাণ্ডে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ক্ষুব্ধ। তাই ১৫ অক্টোবরের মধ্যে বুয়েটে সকল রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।

>> বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কেন ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও ঘটনাস্থলে যাননি এবং ৩৮ ঘণ্টা পরে উপস্থিত হয়ে কেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেছেন, কোন তিনি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে স্থান ত্যাগ করেছেন, তাকে ক্যাম্পাসে এসে বুধবার দুপুর ২টার  মধ্যে জবাবদিহি করতে হবে।

>> আবাসিক হলগুলোতে র‌্যাগের নামে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর সকল প্রকার শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে এবং এ ধরনের সন্ত্রাসে জড়িত সকলের ছাত্রত্ব প্রশাসনকে বাতিল করতে হবে। একই সাথে আহসানউল্লাহ হল এবং সোহরাওয়ার্দী হলের পূর্বের ঘটনাগুলোতে জড়িত সকলের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে।

>> আগে ঘটা এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ এবং পরবর্তীতে তথ্য প্রকাশের জন্য একটি কমন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে  কোনো ওয়েবসাইট বা ফর্ম থাকতে হবে এবং নিয়মিত প্রকাশিত ঘটনা রিভিউ করে দ্রুততম সময়ে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বুয়েটের বিআইআইএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে। ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রদর্শন করতে হবে এবং পরবর্তী ১ মাসের মধ্যে কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে সবগুলো হলের প্রত্যেক ফ্লোরের সবগুলা উইংয়ের দুই পাশে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে।

>> রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্ৰ উৎখাতের ব্যাপারে নীরব থাকা এবং ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় শেরে বাংলা হলের প্রভাস্টকে ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।

বৃহস্পতিবার শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মিছিলয়ে শেরে বাংলা হল ঘুরে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। বিকালে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী পথনাটক মঞ্চস্থ করার কথা রয়েছে শিক্ষার্থীদের।