আবরার হত্যা ‘আদর্শবর্জিত রাজনীতির ফল’

ছাত্রলীগ কর্মীদের মারধরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ ও হাতাশা জানিয়েছেন লেখক, অধ্যাপক, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের শীর্ষস্থানীয়রা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2019, 06:17 PM
Updated : 9 Oct 2019, 07:07 PM

এ ধরনের ঘটনা আদর্শবর্জিত ও পেশি শক্তিনির্ভর রাজনীতি ও সংগঠন পরিচালনার ফল বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর ইমেইল থেকে পাঠানো এই বিবৃতি দাতাদের মধ্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, সৈয়দ হাসান ইমাম, হাসান আজিজুল হক, অধ্যাপক অনুপম সেন, সরোয়ার আলী, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার ও মামুনুর রশীদ রয়েছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়, “সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলো প্রমাণ করে রাজনৈতিক দলের আদর্শবিহীন দেউলিয়া চরিত্র। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ছাত্র, যুব ও দলীয় কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ।

“কোনো প্রকার আদর্শের ভিত্তিতে দল ও অঙ্গ সংগঠন পরিচালনা না করে শুধু পেশি শক্তি নির্ভর দল গঠন ও পরিচালনা কী ভয়াবহ পরিণতি আনে তা আজ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “কিছু উচ্ছৃঙ্খল আদর্শহীন যুব ও ছাত্র সংগঠনের হাতে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ জিম্মি থাকতে পারে না। আমরা অতি দ্রুত এই সংকট থেকে জাতি ও দেশকে রক্ষা করতে সরকারের আশু পদক্ষেপ প্রত্যাশা করি। একইসাথে জনগণকে সচেতন ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।”

গত রোববার রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে ধরে নিয়ে যায় ওই হলেরই একদল ছাত্রলীগ কর্মী। ‘শিবিরকর্মী সন্দেহে’ মধ্যরাত পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও মারধর করা হয় বলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। নির্যাতনের এক পর্যায়ে আবরারের মৃত্যু হলে লাশ ফেলে রাখা হয় হলের সিঁড়িতে।

এই ঘটনায় বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তদন্তের ভিত্তিতে ১১ নেতাকর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এই ঘটনায় ঢাকাসহ দেশব্যাপী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ চলছে। খুনিদের রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিবৃতিতে আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে বলা হয়, “এক গভীর উৎকন্ঠা ও অসীম বেদনায় নিমজ্জিত আজ পুরো জাতি। বুয়েট শিক্ষায়তনে সহপাঠী আবরার ফাহাদকে একদল ছাত্রলীগকর্মী নির্মমভাবে হত্যা করেছে।”

যুবলীগের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলা হয়, “সাম্প্রতিক সময়ে যুবলীগ নামক যুব সংগঠনের সামজিক অনাচার, মাদক ব্যবসা ও দুর্নীতির অবিশ্বাস্য নিদর্শন আমাদের দারুনভাবে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত ছাত্র ও যুব সংগঠনের এ বিপথগামিতা আমাদের হতাশ ও ব্যথিত করে। আবরার হত্যার শুধুমাত্র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাঝে আমাদের এ ভয়াবহ সংকট নিরসন হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি না।  

“আমরা মনে করি, মানবিক মূল্যবোধের যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আজ জাতিকে গ্রাস করেছে, তা থেকে মুক্তি পেতে হলে সরকার, শাসক দল ও সকল রাজনৈতিক দলকে নিজ নিজ দল, অঙ্গ সংগঠন, সরকার ও প্রশাসনের অভ্যন্তরে মানবিক মূল্যবোধ ও সহনশীল-সংস্কৃতির বীজ উপ্ত করতে হবে।

“বিশেষ করে সরকার ও সরকারি দলকে এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথায় জাতি এক ভয়াবহ দুর্যোগের মুখোমুখি হবে।”