ক্যাসিনো নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

অবৈধ ক্যাসিনো বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আলোচিত অভিযানের প্রসঙ্গটি স্বাভাবিকভাবেই এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে, আর তা নিয়ে কথাও বলেছেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2019, 02:58 PM
Updated : 9 Oct 2019, 05:40 PM

বুধবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা জুয়া খেলায় অভ্যস্ত হয়ে গেছেন, তাদের জন্য আলাদা একটা দ্বীপে ক্যাসিনোর ব্যবস্থা করে দেওয়া যেতে পারে।

আওয়ামী লীগের যুব সংগঠন যুবলীগের নানা কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অসন্তোষ প্রকাশের পর গত মাসে ঢাকার ক্রীড়া ক্লাবগুলোতে অভিযানে যায় র‌্যাব, তাতে সেখানে অবৈধভাবে ক্যাসিনো পরিচালনায় যুবলীগের নেতাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রকাশ পায়।

বাংলাদেশের আইনে ক্যাসিনো বা জুয়ার আসরের অনুমোদন দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই, বরং সংবিধানে জুয়া বন্ধের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।

র‌্যাবের অভিযানে ক্যাসিনো আলোচনায় উঠে আসার পর পর্যটন সচিব সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছিলেন, কক্সবাজারে প্রস্তাবিত বিশেষ পর্যটন অঞ্চলে বিদেশিদের জন্য ক্যাসিনোসহ আধুনিক সব আয়োজন থাকবে।

এর মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছিলেন, “ক্যাসিনো যদি চালাতে হয় তাহলে তারও একটা নীতিমালা হবে, তারও একটা সিদ্ধান্ত হবে।”

তবে পরে তিনি বলেছিলেন, আইনে না থাকলে অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।  

প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “যারা এখন ক্যাসিনো খেলায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে বা এই ধরনের জুয়া খেলায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে, কেউ হয়ত বিদেশে ভেগে গেছে..কেউ হয়ত..নানা রকম..তাদের জন্য একটা দ্বীপ খুঁজে বের করুন। সেই দ্বীপে আমরা সব ব্যবস্থা করে দেব।

“ভাষানচর বিশাল দ্বীপ। এক পাশে রোহিঙ্গা আর এক পাশে আপনাদের ব্যবস্থা করে দেব, সবাই সেখানে চলে যান।”

নোয়াখালীর ভাষানচরে রোহিঙ্গাদের রাখার জন্য আবাস তৈরি করা হচ্ছে।

জুয়া খেলা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “অভ্যাস যখন বদ অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়..এই বদ অভ্যাস তো যাবে না। বারবার খোঁজাখুঁজি করতে হবে। সেটা না করে তাদের একটা জায়গাই দিয়ে দেব। ভাষানচরের এক সাইডে যদি ব্যবস্থা করে দেই। খুব ভালো জায়গা, কোনো অসুবিধা নাই। ১০ লক্ষ লোকের বসতি দেওয়া যাবে।

“কারা কারা করতে চান। নীতিমালা তৈরি করে, লাইসেন্স দিতে হবে। ট্যাক্স দিতে হবে। তারপর ওখানে গিয়ে ইচ্ছেমত সবাই করেন। আমার কোন আপত্তি নেই। সেই ব্যবস্থাই করে দেব,” হাসতে হাসতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, “আমরা ট্যাক্স পাবো তো। টাকা পাব। ডেভেলপমেন্ট করতে পারব। আর কী ! এখন দেখা যাচ্ছে লুকায়ে চুরায়ে … এটা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। দেশের জন্য ক্ষতিকর। দেশটা তো ঠিক থাকল! এক চরে পাঠায়ে দিলাম সব!”

ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের এই ক্যাসিনো চালাতের যুবলীগের এক নেতা

অবৈধ ক্যাসিনো দীর্ঘদিন ধরে চললেও তা বন্ধে এতদিন পর পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি যদি বলি সাংবাদিকরাও তো কোনোদিন বলেন নাই যে এই রকম একটা অনিয়ম হচ্ছে। এত খবর আপনারা রাখেন। কই এই জায়গায় কেন পৌঁছান নাই কখনও। সেই প্রশ্নের জবাব কি দিতে পারবেন? পারবেন না। আমি জানি পারবেন না। আর কেন পারবেন না তাও একেবারে জানি না, তা না।”

“আমি যখনই খবর পেয়েছি ব্যবস্থা নিয়েছি এবং এটার বিরুদ্ধে সব সময় নিতেই হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “যেখানে যেখানে অনিয়ম আছে সেখানেই আমরা ধরব।”

দুর্নীতিবিরোধী অভিযান আওয়ামী লীগের আগামী সম্মেলনের জন্য বার্তা কি না- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটা প্রশ্নের অপেক্ষা রাখে না। খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। যারাই অন্যায় করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আমি তো বলেই দিয়েছি। আমি যেটা বলছি তার প্রমাণ তো আপনারা পাচ্ছেন। এখানে কোনো দ্বিধা দ্বন্দ্ব নেই।

“তাছাড়া সম্মেলন যখন হবে.. সেটা..আমাদের বিশাল সংগঠন আছে। তৃণমূল থেকে সংগঠন আমরা করে আসছি। কাজেই সেখানে নেতৃত্ব..আমাদের কমিটির যারা সদস্য যাকে মেনে নেবে তারা হবে। তারা বাছার সময় এটাই নেবে।”

অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে সজাগ থাকার কথাও আসে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কথায়।

“তবে এটা দেখতে হবে যারা পার্মানেন্ট গভর্নমেন্ট পার্টি (পিজিপি) হয়ে যায়। এগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে মামলা, যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত, অবশ্যেই তাদেরকে পরিহার করতে হবে। সেটা ইতোমধ্যে আমরা নির্দেশ দিয়েছি।

“তারপরও অনেক সময় হয়ে যায়। বাংলাদেশে কার কে যে আত্নীয়, কার কে যে বন্ধু আমাদের সমাজটাই এমন। তখন সবাই সবার আপনজন হয়ে যায়। এটা একটা সমস্যা তো আছেই আমাদের।”