আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে বুয়েটের আরও তিন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
Published : 08 Oct 2019, 07:37 PM
এরা হলেন- মনিরুজ্জামান মনির (২১), মো. আকাশ হোসেন (২১) ও শামসুল আরেফিন রাফাত (২১)।
এই তিনজনকে গ্রেপ্তারের খবর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান।
তিনি বলেন, এই তিনজন আবরারের বাবার করা মামলার এজাহারনামীয় আসামি।
গ্রেপ্তার অভিযানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ (মঙ্গলবার) বিকালে ডেমরা থেকে মনিরকে এবংজিগাতলা থেকে রাফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয় সন্ধ্যায় গাজীপুর বাইপাস সড়ক থেকে।”
মনির বুয়েটের ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ষোড়শ ব্যাচের তৃতীয় বর্ষে, আকাশ একই ব্যাচের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষে এবং রাফাত মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সপ্তদশ ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
আবরার ছিলেন বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গত রোববার রাতে শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পিটুনিতে তিনি নিহত হন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার গ্রেপ্তার মনির বুয়েট ছাত্রলীগের সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। আবরার হত্যাকাণ্ডের পর যে ১১ জনকে ছাত্রলীগ বহিষ্কার করেছে, তার মধ্যে মনিরও রয়েছেন।
আবরারের বাবা কুষ্টিয়াবাসী অবসরপ্রাপ্ত ব্র্যাককর্মী বরকতুল্লাহ মোট ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন।
এনিয়ে এজাহারভুক্ত ১৯ আসামির মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ; এর মধ্যে আগে গ্রেপ্তার ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আরাফাত লেলিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করতে আমাদের অভিযান চলছে।”
পেটানোর কথা ‘স্বীকার’
হত্যামামলার পরপরই গ্রেপ্তার ১০ জন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবরার ফাহাদকে পেটানোর হত্যা স্বীকার করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
হেফাজতে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন।
তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তারা আবরারকে ডেকে এনে পিটিয়ে হত্যা করা কথা স্বীকার করেছে।”
তারা হলেন- বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, দ্বিতীয় বর্ষ), সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, দ্বিতীয় বর্ষ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, তৃতীয় বর্ষ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ), মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, তৃতীয় বর্ষ) এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না।
মঙ্গলবার তাদের আদালতের মাধ্যমে পাঁচ দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ; তারা এখন রয়েছেন ডিবি কার্যালয়ে।
বাতেন বলেন, “মামলা প্রথম দিন থেকেই গোয়েন্দা তদন্ত শুরু করেছে। কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে, কারা কারা জড়িত, কার কী ভূমিকা ছিল, এর আগে নির্যাতনের কোনো ঘটনা তারা ঘটিয়েছে কিনা, তা তদন্ত করে বের করা হবে।”
মামলায় যে ১৯ জনের নাম দেওয়া হয়েছে, এর বাইরে আর কেউ জড়িত আছে কি না, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আবরারকে নির্যাতনের ঘটনায় বুয়েট ছাত্রলীগের আরেক নেতা অমিত সাহার জড়িত থাকার অভিযোগ শিক্ষার্থীরা করে আসছেন, যার নাম মামলায় নেই।
এনিয়ে প্রশ্নে পুলিশ কর্মকর্তা বাতেন বলেন, “মামলা আবরারের বাবা করেছেন। মামলা করা পরপরই ১০ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
“অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এখানে কেউ ছাড় পাবে না। তদন্তে যারই নাম আসবে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।”
গোয়েন্দা পুলিশের অন্য এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অমিত সাহা নামে যে শিক্ষার্থীর নাম বলা হচ্ছে, সে গত ২ অক্টোবর দেশের বাড়ি গেছে বলে জানা গেছে। তারপরেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, “তদন্তের প্রথম দিনই বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। শেরে বাংলা হল ছাড়াও আরও কিছু হলে প্রায়ই নির্যাতন হত। কিছু ভুক্তভোগী পাওয়া গেছে। তারা কিছু তথ্য দিলেও নাম প্রকাশ করার অনুরোধ করেছেন।”
এদিকে আবরার হত্যা মামলায় আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমার দেওয়ার জন্য আগামী ১৩ নভেম্বর দিন ঠিক করেছেন ঢাকার মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী।
তিনি মঙ্গলবার মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য করে দেন।
আরও খবর