বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১০ আসামিকে আদালতে পাঠিয়ে দশদিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ।
Published : 08 Oct 2019, 01:45 PM
ডিএমপির লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কামাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যে দশজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।”
গ্রেপ্তাররা হলেন- বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, দ্বিতয়ি বর্ষ), সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, দ্বিতীয় বর্ষ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, তৃতীয় বর্ষ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ), মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, তৃতীয় বর্ষ) এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না।
ফাহাদকে হত্যার ঘটনায় তার বাবা বরকতুল্লাহ সোমবার চকবাজার থানায় যে ১৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন, তাতে এই দশজনের নামও রয়েছে।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে সাতজনের নাম ছাত্রলীগের বহিষ্কৃতদের তালিকাতেও আছে। এরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মুহতাসিম ফুয়াদ, মেহেদী হাসান রবিন, অনিক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশাররফ সকাল ও মুনতাসির আল জেমি।
এই হত্যাকাণ্ডের পর সোমবার রাতে ১১ জনকে স্থায়ীভাবে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের কথা জানায় ছাত্রলীগ।
মামলা যাচ্ছে ডিবিতে
চকবাজার থানার ওসি সোহরাব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, আবরার ফাহাদ হত্যা মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করবে।
“বিকালের দিকে মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের সম্ভাবনা রয়েছে।”
রোববার রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই হলের শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরারকে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডেকে নিয়ে যায় কয়েকজন। পরে শিক্ষার্থীরা রাত ২টার দিকে হলের দ্বিতীয়তলার সিঁড়িতে তার লাশ পায়।
পুলিশ জানিয়েছে, আবরারের দুই কাঁধের নিচ থেকে হাতের কব্জি পর্যন্ত কালসিটে ছিল। একইভাবে কোমর থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ছিল জখমের দাগ।
‘ভোঁতা কিছু দিয়ে’ পেটানোর ফলে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে আবরারের মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন।
সহপাঠীদের বরাতে সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
শেরে বাংলা হলের দ্বিতীয় তলার একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় আবরার ফাহাদকে চার হাতপায়ে ধরে তিনজন মিলে করিডোরে ফেলে রেখে যাচ্ছে। সেখানে যাদের দেখা গেছে, তারা সবাই হল শাখা ছাত্রলীগের জুনিয়র নেতাকর্মী বলে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি করার কথা জানিয়েছে।
আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে সোমবার থেকে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন।