বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
Published : 07 Oct 2019, 09:36 PM
আবরারের বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্র্যাককর্মী বরকতুল্লাহ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর চকবাজার থানায় এ মামলা দায়ের করেন বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যে দশজনকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের সবার নাম রয়েছে আসামির তালিকায়।”
এই দশজন হলেন- বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, দ্বিতয়ি বর্ষ), সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, দ্বিতয়ি বর্ষ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়ো মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, তৃতীয় বর্ষ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ), মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, তৃতীয় বর্ষ) এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না।
রোববার রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই হলের শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরারকে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডেকে নিয়ে যায় কয়েকজন। পরে শিক্ষার্থীরা রাত ২টার দিকে হলের দ্বিতীয়তলার সিঁড়িতে তার লাশ পায়।
পুলিশ জানিয়েছে, আবরারের দুই কাঁধের নিচ থেকে হাতের কব্জি পর্যন্ত কালসিটে ছিল। একইভাবে কোমর থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ছিল জখমের দাগ।
‘ভোঁতা কিছু দিয়ে’ পেটানোর ফলে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে আবরারের মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন।
সহপাঠীদের বরাতে সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাংগঠনিক তদন্তের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে বুয়েট ছাত্রলীগের ১১ জনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রাতে এক ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে’ এ ঘটনায় থানায় একটি জিডি এবং একটি তদন্ত কমিটি করার কথা জানিয়েছে।
বুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদ এর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনায় চকবাজার থানায় জিডি করা হয়েছে। জিডির ধারাবাহিকতায় পুলিশ প্রশাসন ইতোমধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে।
“সংগঠিত অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনার বিষয়ে সোমবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালক, প্রভোস্ট, রেজিস্টার ও সিনিয়র শিক্ষকদের নিয়ে একটি সভা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সিনিয়র শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।”
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তদন্ত কাজে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানানো যাচ্ছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।