স্ত্রীর চোখে সম্রাট

ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ব্যক্তিজীবনে কেমন, তার সম্পদের পরিমাণ, দলের প্রতি মনোভাব, আগ্রহের দিকসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন এই যুবলীগ নেতার স্ত্রী শারমিন চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2019, 03:00 PM
Updated : 6 Oct 2019, 06:52 PM

তার মতে, সম্রাট সম্রাটই, তার চলাফেরা অন্য নেতাদের থেকে আলাদা।

সম্রাটপত্নীর ভাষ্য অনুযায়ী, শুধু জুয়া ছাড়া অন্য কিছুর নেশা নেই যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতির। এই জুয়া খেলার জন্য সিঙ্গাপুর যেতেন তিনি। সেখানে একটি বিয়েও করেছেন।

গত মাসের মাঝামাঝিতে ঢাকায় র‌্যাবের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় ছিলেন সম্রাট।

রোববার ভোর রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার একটি বাড়ি থেকে এক সহযোগীসহ সম্রাটকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর দুপুর দেড়টায় সম্রাটকে নিয়ে কাকরাইলে তার অফিসে যায় র‌্যাব।

সম্রাটকে নিয়ে কাকরাইলে তার অফিসে অভিযান চালায় র‌্যাব

একইসঙ্গে শান্তিনগরের শেলটেক টাওয়ারের পঞ্চম তলায় এবং মহখালী ডিওএইচএসের ২৯ নম্বর সড়কে সম্রাটের দুটি বাসায় অভিযান শুরু হয়।

মহাখালীর ওই বাসায় থাকেন সম্রাটের স্ত্রী শারমিন চৌধুরী। অভিযানের মধ্যেই সেখানে সাংবাদিকরা ভিড় করেন।

তাদের কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে কথা বলেন তিনি।

সম্রাটের স্ত্রী বলেন, “আমার নাম শারমিন চৌধুরী। ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের মিসেস। ১৯ বছর আগে সম্রাটের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে। আমাদের সংসারে একটা ছেলে আছে, সে দেশের বাইরে থাকে।”

সম্রাটের গ্রেপ্তার হওয়ার খবর শুনেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ও অ্যারেস্ট হয়েছে সেটা শুনেছি। কিন্তু ও যে ‘ক্যাসিনোর গডফাদার’ সেটা আমি জানতাম না। আমি জানতাম সে যুবলীগের ভালো একজন নেতা। ঢাকা শহরের এবং ঢাকা দক্ষিণের সবাই জানে সে ভালো একজন নেতা।”

স্ত্রী শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে সম্রাট

গত দুই বছর ধরে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ‘ততোটা ভালো না যাওয়ায়’ সম্রাটের ক্যাসিনো কারবার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা ছিল না বলে দাবি করেন শারমিন চৌধুরী। 

তিনি বলেন, “ওর সম্পদ বলতে কিছুই নাই। ও ক্যাসিনো চালায়া যা ইনকাম করে তা দলের জন্য খরচ করে। দল চালায়। আর যা থাকে তা দিয়ে সিঙ্গাপুরে বা এখানে জুয়া খেলে।

“ও যে ক্যাসিনো চালিয়ে দল চালায় সেটা তার জনপ্রিয়তা দেখে বোঝা যায়। ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের মতো এত জনপ্রিয়তা ঢাকা শহরে কারও নাই। উত্তরেও একজন আছেন নিখিল নামে। তার তো এতো জনপ্রিয়তা নাই।”

জুয়া খেলা নিয়ে কখনও নিষেধ করতেন কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল শারমিনের কাছে।

জবাবে তিনি বলেন, “আমার সাথে ওর একটু মিলতো কম। ও ছেলে-পেলে নিয়ে বেশি সময় কাটাত। ও কিন্তু শুরু থেকেই সম্রাট। নাম যেমন তেমনই শুরু থেকেই সম্রাট।

“অন্য যে সহ-সভাপতি বা নেতারা আছে তাদের মতো ও না। তার চলাফেরা ভালো। ও ধীরে ধীরে কীভাবে ক্যাসিনোতে আসলো এটা আমি জানি না। তবে ওর জুয়া খেলার নেশা আগে থেকেই ছিল।”

সম্রাটের অফিস থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৯ বোতল বিদেশি মদ

বিভিন্ন নারীর সঙ্গে তাকে দেখা যেত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শারমিন বলেন, “না বিভিন্ন নারীর সঙ্গে নয়। দুই বছর ধরে আমাকে সিঙ্গাপুরে নিচ্ছে না। ওখানে মনে হয় চায়না না মালয়েশিয়ান বর্ন একটা নারীর সঙ্গে সম্পর্ক হইছে। সেখানে গেলে ওর সঙ্গেই সময় কাটায়।”

যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার পরে সম্রাটের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে কি না, স্ত্রীর কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা।

জবাবে তিনি বলেন, “তিন-চার বছর ধরে ক্যাসিনোটা। এর আগে এসব ছিল না। আগে সে ঠিকাদারি করত। দলের সবার সঙ্গে ও ভালো ব্যবহার করে, তাদের সঙ্গে একটা বন্ড আছে।

“ও মাঝে মধ্যে সিঙ্গাপুর যেত, সেখানে যেত জুয়া খেলতে। জুয়া খেলা তার নেশা। কিন্তু সম্পত্তি করা তার নেশা না।”

সম্রাটের ঢাকায় সম্পদের পরিমাণ জানতে চাইলে স্ত্রী বলেন, শান্তিনগরের শেলটেক টাওয়ারের ফ্ল্যাট, মহাখালীর এই বাসায় এবং কাকরাইলে অফিসের ফ্লোরটি সম্রাটের। তার আর কোনো বাড়ি বা ফ্ল্যাটের খবর তার জানা নেই।

কাকরাইলের নয় তলা ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে শুধু সম্রাটেরই অফিস। পুরো ভবন তারই কি না তা জানতে চাইলে শারমিন বলেন, “না। চতুর্থ তলায় অফিসের ফ্লোরটি শুধু তার। ওই ভবনে ঢুকতে গেইটে যে কড়া চেক হত, সে কারণে বিল্ডিংয়ে আর কেউ উঠত না।”

সম্রাটের অফিসে মদ ছাড়াও গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা ও দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া পেয়েছে র‌্যাব

শারমিন চৌধুরী বলেন, কিছু দিন ধরে সম্রাট এই বাসায় আসতেন না। তিনি কাকরাইলের অফিসে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে আসতেন।

“আমি প্রকাশ্যে আসি, কিংবা ক্যামেরার সামনে আসি, কিংবা রাজনীতি করি এটা সে পছন্দ করত না। সে চাইত যেন আমি হাউজ ওয়াইফ হয়ে থাকি। আমি শুরু থেকেই নামাজটা পড়ি। ঘরে থাকা পছন্দ করি, সে আমাকে এভাবেই রাখছে।”

ক্যাসিনো ও জুয়াবিরোধী অভিযানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান সম্রাটের স্ত্রী।

“আমি সবার আগে ধন্যবাদ জানাব, দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে। ব্যক্তিগতভাবে তাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাব। আর এই অভিযানটা যদি আরও আগে করা যেত, তাইলে আরও ভালো হত।”

সম্রাটপত্নী বলেন, “আমি যখন বিয়ে করছি তখন জুয়া জিনিসটা কী আমি জানতাম না।  এতো বড় বড় যে খেলার জায়গা আছে আমার মাথায়ই ছিল না।”