যুবলীগ দক্ষিণের সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানকে সঙ্গী করে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার ক্যাসিনো ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন সম্রাট। অবশেষে দুইজনই আটকা পড়েছেন র্যাবের জালে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে রোববার গভীর রাতে আত্মগোপনে থাকা সম্রাট ও আরমানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে আলোচনায় ছিল যুবলীগ নেতা সম্রাটের নাম।
সেদিন যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর সদলবলে কাকরাইলে সংগঠনের কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে রাতভর সেখানে ছিলেন সম্রাট। কিন্তু এরপর তিনি নিরুদ্দেশ হন।
র্যাবের অভিযানের সময় মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্রের ভেতরে সম্রাটের বিশাল ছবি দেখা যায়। ওই ক্লাবের ক্যাসিনো তিনিই চালাতেন এবং মতিঝিল ক্লাবপাড়ায় অন্য ক্যাসিনোগুলো থেকেও প্রতিদিন নির্দিষ্ট হারে চাঁদা তার কাছে যেত বলে গণমাধ্যমে খবর আসে।
তিনি জানান, সম্রাটের বেড়ে ওঠা মতিঝিল আর রমনা এলাকায়। তার বাবা ছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মচারী। তিন ভাইয়ের মধ্যে সম্রাট দ্বিতীয়।
১৯৯৩ সালে ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পান সম্রাট। সে সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন।
ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েই বেপরোয়া হয়ে উঠতে থাকেন সম্রাট। নিজের ওয়ার্ড সভাপতি লুৎফুর রহমানকে প্রহারের অভিযোগও উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। কিন্তু ওই ঘটনায় সম্রাটসহ তিনজনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হলেও পরে তা আর বাস্তবায়ন হয়নি।
তবে তারপর থেকে মতিঝিলের ক্লাব পাড়ায় সম্রাটের আনাগোনা বেড়ে যায়।
নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া ওই যুবলীগ নেতা বলেন, “২০০৩ সালে যুবলীগের কাউন্সিলে জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও মির্জা আজম দায়িত্ব পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্রাটের আসা-যাওয়া বেড়ে যায়।”
তখনই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান মহিউদ্দিন মহি এবং সাধারণ সম্পাদক হন নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন।
সে সময় মহির সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে শাওন নিজের হাত শক্ত করতে সম্রাটকে দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক করেন।
শাওনের বিশ্বস্ত হিসেবেই সম্রাট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে ঢাকা সিটি কর্পোরশনের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করতেন।
২০১২ সালে ওমর ফারুক চৌধুরী যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার পর সম্রাট ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি হন। সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর আরমানকে সহ-সভাপতি করে নেন তিনি।
আরমান অতীতে কখনই আওয়ামী লীগ বা এর কোনো সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
আরমানের প্রোডাকশন হাউস ‘দেশ বাংলা মাল্টিমিডিয়া’র ব্যানারে প্রথম সিনেমাটি মুক্তি পায় গত কোরবানির ঈদে। ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ নামের ওই সিনেমায় অভিনয় করেছেন শাকিব খান ও বুবলী।
সম্রাট এবং আরমান নিজেদের ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে উভয়কে ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
যুবলীগের একাধিক নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের অন্তর্গত মৎস্য ভবন, বিদ্যুৎ বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সকল সরকারি দপ্তরের দরপত্রও সম্রাটের নিয়ন্ত্রণে ছিলে। আর সম্রাটের পক্ষে এসব বিষয় দেখভাল করতেন আরমান।
ঢাকার দুটি বাসায় সম্রাটের দুই স্ত্রী তাদের সন্তানদের নিয়ে থাকেন বলে র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে আরমানের পরিবার সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য কেউ দিতে পারেননি।