হাসিনা-মোদী বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত ৭ চুক্তি, ৩ প্রকল্প উদ্বোধন

নয়া দিল্লিতে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এছাড়া দুই প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন তিনটি যৌথ প্রকল্প।

গোলাম মুজতবা ধ্রুব নয়া দিল্লি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2019, 07:08 AM
Updated : 5 Oct 2019, 01:47 PM

বাংলাদেশের তিস্তার পানি পাওয়ার কোনো সুরাহা না হলেও ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি ভারত যেন ত্রিপুরার একটি শহরে সরিয়ে নিতে পারে, সেজন্য একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

উদ্বোধন হওয়া তিনটি প্রকল্পের মধ্যে দুটি বাংলাদেশের খুলনা ও ঢাকায় ভারতের অর্থায়নে নির্মিত; আরেকটি বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় এলপিজি নেওয়ার প্রকল্প।

শনিবার দুপুরে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর দুজনে যৌথভাবে প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, বহুমুখী ও বহুমাত্রিক সহযোগিতার ফলে দুই দেশের সম্পর্ক এখন বিশ্বে ‘সু-প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের দৃষ্টান্ত’ হয়ে উঠেছে।

সহযোহিতার এই বন্ধনকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ‘মূল মন্ত্র’ বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী।

 

শীর্ষ বৈঠকের আগে সকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তার দেশের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ভারত প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ দেয়।

এরপর শীর্ষ বৈঠরে জন্য দুপুরে নয়া দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউজে শেখ হাসিনা পৌঁছলে ফটকে এগিয়ে এসে তাকে অভ্যর্থনা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী।

ছবি: পিআইডি

এরপর দুই দেশের সরকার প্রধানের নেতৃত্বে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর তাদের উপস্থিতিতেই চুক্তি সই ও চুক্তিপত্র বিনিময় হয়।

>> স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা স্মারকের আওতায় ফেনী নদীর ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করতে পারবে ভারত; ওই পানি তারা ত্রিপুরা সাবরুম শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পে ব্যবহার করবে।

>> উপকূলে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থার (কোয়েস্টাল সারভাইল্যান্স সিস্টেম-সিএসএস) বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে দুই দেশ।

>> চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহনের বিষয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই হয়েছে।

>> চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশকে দেওয়া ভারতের ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নে।

>> সহযোগিতা বিনিময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব হায়দরাবাদের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

>> এছাড়া সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বিনিময় নবায়ন এবং যুব উন্নয়নে সহযোগিতা নিয়ে দুটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

ছবি: ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টুইপার পাতা

চুক্তি ও সমঝোতাপত্র বিনিময়ের পর শেখ হাসিনা ও মোদী যৌথভাবে প্রকল্প তিনটি উদ্বোধন করেন।

এগুলো হল-

>> খুলনায় ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বাংলাদেশ-ভারত প্রফেশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট

>> ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে বিবেকানন্দ ভবন

>> বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় এলপিজি আমদানি

প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিগত এক দশকে আমাদের উভয় দেশের মধ্যে বিভিন্ন প্রথাগত সহযোগিতা প্রভূত পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন নতুন ও অপ্রচলিত খাত যেমন ব্লু ইকোনমি ও মেরিটাইম, পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, মহাকাশ গবেষণা, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ রপ্তানি ও সাইবার সিকিউরিটি ইত্যাদি খাতে উভয় দেশ সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করেছে।

“এসব বহুমুখী ও বহুমাত্রিক সহযোগিতার ফলে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিশ্ববাসীর সামনে সু-প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।”

এলপিজির প্রকল্প নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এটা আমাদের উভয় দেশের বিদ্যমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে বলে আমি মনে করি। এর ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যসমূহের জ্বালানি চাহিদা পূরণ অনেকাংশে সহজ হবে বলে আশা করছি।”

খুলনার বিআইপিএসডিআই বাংলাদেশের ওই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে বিভিন্ন রকম উন্নত মানের যন্ত্রপাতি দিয়ে অবদান রাখবে বলে আশা করেন শেখ হাসিনা।

তিনি আশা করেন, ভারত সরকারের আর্থিক অনুদানে স্থাপিত রামকৃষ্ণ মিশনের বিবেকানন্দ ভবন শিক্ষা বিস্তারে সহায়তার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে ভূমিকা রাখবে।

ছবি: পিআইডি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “গত এক বছরে আমি ভিডিও লিংকের মাধ্যমে ৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছি। আজকে তিনটি প্রকল্প যোগ হয়ে এক ডজন যৌথ প্রকল্পের উদ্বোধন করলাম। এই প্রকল্পগুলোর উদ্দেশ্য আমাদের নাগরিক জীবনমানকে উন্নত করা। এটা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মূল মন্ত্র।”

শীর্ষ বৈঠকের পর হায়দ্রাবাদ হাউজে শেখ হাসিনা তার সম্মানে দেওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন।

টানা তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর শেখ হাসিনার এটা ভারতে প্রথম সফর; অন্যদিকে মোদীও টানা দ্বিতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন।

তাদের শাসনকালে দুই দেশের সম্পর্ক সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে বলে বলা হলেও এখনও তিস্তা চুক্তির জট খোলেনি, যা বাংলাদেশের বহুল আকাঙ্ক্ষিত।

ছবি: ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টুইপার পাতা

শীর্ষ বৈঠকের পর হায়দ্রাবাদ হাউজে শেখ হাসিনা তার সম্মানে দেওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন।

দিনের কর্মসূচিতে বিকালে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘টেগোর পিস অ্যাওয়ার্ড’ দেয় এশিয়াটিক সোসাইটি।

রাতে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন শেখ হাসিনা।