পেঁয়াজের দর বেঁধে দেওয়ার চিন্তা

লাগামহীন হয়ে ওঠায় খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2019, 11:45 AM
Updated : 2 Oct 2019, 11:46 AM

আমদানি কিংবা উৎপাদন মূল্যের সঙ্গে এই নিত্যপণ্যের বাজার দরের মিল না থাকায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বুধবার সাংবাদিকদের একথা জানিয়েছেন।

ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর বাংলাদেশে পেঁয়াজের দর চড়তে থাকায় অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হলেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকার  নিচে নামছিল না।

এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় আড়তে অভিযান চালানোর পর পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমলেও খুচরায় তার প্রভাব এখনও কমেনি।

বাংলাদেশে বছরে মোট পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ টন এবং গত অর্থ বছরে দেশে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন উৎপাদনের তথ্য জানিয়ে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে পেঁয়াজের সঙ্কট না থাকায় দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।

বাণিজ্যমন্ত্রীও বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমদানি শুরু হওয়ায় আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম সর্বোচ্চ ৬০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।

“পেঁয়াজ আমদানি ভারত থেকেই বেশি হত। আজকে সকালে টেকনাফ বন্দরে (মিয়ানমার থেকে) ৪৮৩ টন পেঁয়াজ ঢুকেছে। আরও চার থেকে ৫০০ টন ঢুকবে। পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে এবং বেশি লাভ করলেও ৬০ টাকার বেশি দাম হওয়া উচিত নয়।”

তিনি বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলেও তার প্রভাব পড়তে যে সময় লাগার কথা, তার আগেই দাম বেড়েছে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ সুযোগ নিয়েছে।

এই অবস্থায় পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে কি না- প্রশ্ন করা হলে টিপু মুনশি বলেন, “এ ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। আমরা একটা কস্টিং পেয়েছি, অনেক কিছু ওয়াস্ট হতে পারে, প্লাস প্রফিট ধরে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।”

দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের মূল্য আলাদা হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দুই রকম নির্ধারণ করা তো যাবে না, এক রকমই করতে হবে। হিসাব করে আলোচনা করা হবে, কী পরিমাণ দাম ফিক্সড আপ করে দিলে ভালো হয়।

“সব সময় বিদেশি পেঁয়াজের চেয়ে দেশি পেঁয়াজের দাম বেশি থাকে, ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি থাকে। সব বিবেচনা করে একটি পয়েন্টে আসতে চাই, যাতে এই দামে সবাই নিতে পারে।”

দাম নির্ধারণ কবে নাগাদ হতে পারে- জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “ব্যবস্থা তো নিয়েছি চলছে, দুই দিন দিনের মধ্যে আজ যে মাল বেরুবে, জরুরিভাবে মালটা আসলে বাজারে প্রভাব পড়বে।”

একশ টাকা ছাড়িয়ে গেছে পেঁয়াজের কেজি, এই সময়ে টিসিবির ট্রাক থেকে ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনতে বাড়ছে ভিড়। মঙ্গলবার সচিবালয়ের সামনে সড়কের ছবি। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে সরকারের  চেষ্টার কথা জানান তিনি।

টিপু মুনশি বলেন, “আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। বেশ কিছু বাজারে জরিমানা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমরা নিজেরাও ৪৫ টাকা করে টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করছি। আজ কালকের মধ্যে এর প্রভাব বাজারে পড়বে।”

দাম বৃদ্ধির কারসাজিতে যারা যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।

“কার কাছে কী পরিমাণ স্টোরেজ আছে তা দেখছি। পেঁয়াজ বেশি দিন রাখতে পারবে, তাও না।”

মিয়ানমার থেকে আনলে আমদানি খরচ কম পড়ার বিষয়টি তুলে ধরেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

“ভারতে এখন দাম ৯০ রুপির মতো, ভাগ্য ভালো যে মিয়ানমার থেকে কম দামে পাচ্ছি।”

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে কি না- প্রশ্নে টিপু মুনশি বলেন, “ভারত থেকে রপ্তানি বন্ধ হবে, চিন্তাও করিনি, এটার উপর তো কারও হাত নেই। আমাদের স্বাবলম্বী হলে হলে ৭ থেকে ৮ লাখ টন বেশি উৎপাদন করতে হবে।

“ভারত এভাবে বন্ধ করে না দিলে এ ব্যর্থতার প্রশ্ন আসত না, কিছু সুযোগ ব্যবসায়ীরা নিয়েছে, তা আমরা দেখছি।”

ভোক্তাদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন,“সব ভোক্তারা যদি ৭ দিন পেঁয়াজ না কিনি তাহলে তাদের পেঁয়াজ কিন্তু পচে যাবে। এ সুযোগটা তারা নিচ্ছে কারণ আমরা পেঁয়াজের জন্য হাহাকার করছি। সচেতনও তো হতে হবে, সুযোগটা তারা নিচ্ছে। স্থায়ী সমাধান হচ্ছে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানো।”