‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননায় ভূষিত শেখ হাসিনা

বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননায় ভূষিত করেছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাক্সিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)।

রিয়াজুল বাশার নিউ ইয়র্ক থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2019, 04:21 AM
Updated : 24 Sept 2019, 04:42 AM

সোমবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন জিএভিআই বোর্ডের চেয়ার নগচি ওকোনজো-আইয়েলা।

বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির ব্যাপক সফলতা, বিশেষ করে পোলিও নির্মূল এবং ডিপথেরিয়া, হেপাটাইসিস বি ও রুবেলার মত মরণব্যাধি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখায় শেখ হাসিনার প্রশংসা করে এ পুরস্কার তার হাতে তুলে দেওয়া হয়।

পুরস্কার তুলে দেওয়ার আগে শংসাপত্র পড়ে শোনান এনগোজি ওকোনজো-আইয়েলা, যিনি নাইজেরিয়ার সাবেক অর্থমন্ত্রী ও বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক এমডি । স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও টুইটারের বোর্ডেও তিনি আছেন।

শংসাপত্রে তিনি বলেন, “এই পুরস্কার তাদের জন্য, যারা শিশুদের জীবন রক্ষার জন্য জরুরি টিকাদানে উদ্যোগী হয়েছেন এবং কোনো শিশু যাতে বাদ না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে কাজ করেছেন।

“শুধু টিকাদান কর্মসূচি নয়, শিশু অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নেও শেখ হাসিনা একজন সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন।”

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা জিএভিআই, যা ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত, সারাবিশ্বে কোটি কোটি শিশুর জীবন রক্ষায় ভূমিকা রাখছে টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে।

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের এ উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী সেথ বার্কলে অনুষ্ঠানে বলেন, “টিকাদান কর্মসূচিতে সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি একজন সত্যিকারের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি শিশুদের সুস্থভাবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন।”

সম্মাননা পাওয়ার পর শেখ হাসিনা তার সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বলেন, “এ পুরস্কার আমার না। এটা বাংলাদেশের জনগণকে আমি উৎসর্গ করলাম।”

সাড়ে ১৬ বছরের বেশি সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা শেখ হাসিনার সময়ে বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি অনেক বেশি গতি পেয়েছে এবং সেই সঙ্গে এসেছে সাফল্য। ১৯৯০ সালে যেখানে দেশের ৬০ শতাংশ শিশু টিকা পেত, এখন তা ৮২ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রথম টিকা নেওয়ার হার প্রায় ৯৯ শতাংশ।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে তিনি যখন প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন, তখন পরিস্থিতি এরকম ছিল না।

“প্রথমে আমাদের দেশের মানুষের একটু আপত্তি ছিল। কিন্তু আমি নিজে মানুষের কাছে যাই। নিজে ভ্যাকসিন খাওয়াতে শুরু করি।… এভাবে করার ফলে সারাদেশে মানুষের মধ্যে এমন একটা চেতনা জাগ্রত হয়েছে যে তারা নিজেরাই এখন টিকাদান কর্মসূচিতে অংশ নেয়।” 

এই চেতনা ধরে রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “টিকাদান কর্মসূচি বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের সাফল্যের গল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে অব্যাহত সমর্থন ও ভূমিকা রেখে চলায় ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সসহ অন্যান্য অংশীদারদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ছাড়াও স্কুলে এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রমের মাধ্যমে টিকা দেওয়া হয়। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার বিষয়ে আমরা বরাবরই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভিশন ২০২১ ও ভিশন ২০৪১ এর মাধ্যমে আমরা দেশকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই, যেখানে সবার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত হবে।”

টিকার আওতা সম্প্রসারণের তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) অধীনে আমাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে জাতীয় ডিটিপি৩ (ডিপথেরিয়া, ধনুষ্টংকার ও হুপিং কাশি) কাভারেজ ৮৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৮ শতাংশ। এমসিসি১ কভারেজ ৭৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৭ শতাংশ। গত পাঁচ বছরে সব জেলায় ভ্যাকসিনের কভারেজ বেড়ে হয়েছে ৮২ শতাংশের বেশি।”

নিযাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যেও টিকাদান কর্মসূচি ছড়িয়ে দেয়ার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তিনি।

অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।