ইসিতে শুদ্ধি অভিযান, সন্দেহের তালিকায় ১৫ জন

এনআইডি জালিয়াতি ও দুর্নীতি বন্ধে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু হয়েছে মন্তব্য করে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেছেন, ইতোমধ্যে দুটি তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রাথমিক তথ্যে সন্দেহভাজন ১৫ জনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2019, 11:28 AM
Updated : 23 Sept 2019, 11:28 AM

সোমবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক সাংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এনআইডি জালিয়াতি বন্ধে যা যা দরকার, তার সবই করা হবে।

“আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমাদের মূল ডেটাবেজ সুরক্ষিত আছে। যারা এখানে ঢোকার অপচেষ্টা করেছিল তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আইটি বিভাগ এই অপচেষ্টাকারীদের চিহ্নিত  করেছে।  আমরা কাউকে ছাড় দেব না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স।

“এটা বাস্তবায়ন করতে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সিআইডি, দুদক, এসবির সহায়তা প্রয়োজন হলে আমরা তাদের সহায়তাও নেব।“

এক রোহিঙ্গা নারী সম্প্রতি ভুয়া এনআইডি সংগ্রহ করে চট্টগ্রামে পাসপোর্ট নিতে গিয়ে ধরা পড়ার পর জালিয়াত চক্রের খোঁজে নামে নির্বাচন কমিশন। রোহিঙ্গা সন্দেহে অর্ধশত এনআইডি বিতরণ আটকে দেয় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগ।

ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৭-২০০৮ সালে ব্যবহৃত কিছু অকেজো ল্যাপটপ নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় আরও অন্তত পাঁচটি ল্যাপটপ হারিয়ে যায়, যার দুটি জালিয়াত চক্রের হাতে পড়ে বলে তদন্ত দলের সন্দেহ।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগে দুই দালালকে আটক করার পর তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীনকে গ্রপ্তার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে সেই ল্যাপটপ দুটির একটি উদ্ধার করা হয়।

পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ল্যাপটপসহ মোস্তফা ফারুক নামে এক অস্থায়ী কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের অধীনে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে টেকনিক্যাল সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে কাজ করেছিলেন।

এই জালিয়াত চক্রের সঙ্গে কতজন সম্পৃক্ত রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করেননি মহাপরিচালক সাইদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “এ মুহূর্তে নাম বলতে চাই না। আমরা পর্যায়ক্রমে তাদের নাম প্রকাশ করব। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে এর সঙ্গে কতজন জড়িত। তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার স্বার্থে আমরা এখনই তাদের নাম প্রকাশ করছি না। তবে এই সংখ্যা ১৫ জনের বেশি না।”

দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই করার আশ্বাস দিয়ে মহাপরিচালক বলেন, “ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের ৬১ জনের তালিকা পেয়েছি, যারা ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেছে। তাদের তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। তারা কীভাবে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করল, কারা তাদের সহযোগিতা করল… যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১২ সালে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থেকে ইসির চারটি এবং বিভিন্ন সময় আরও তিনটি ল্যাপটপ হারিয়েছিল।

তবে সার্ভারে প্রবেশের জন্য ইসির নির্ধারিত পাসওয়ার্ড ও মডেম থাকতে হয় বলে ওই ল্যাপটপগুলো দিয়ে সার্ভারে প্রবেশ করা সম্ভব নয় বলে দাবি করেন তিনি।

অতীতে এনআইডির কাজে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদেরও নজরদারিতে রাখা হচ্ছে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, “২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধের কারণে ইসি থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছে যারা, তাদের তালিকা করে আমরা বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছি । কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিয়েছি, যাতে কোনোভাবেই অস্থায়ী ভিত্তিতে তাদের নিয়োগ দেওয়া না হয়। ডেটা এন্টি অপারেটর হিসেবেও যাতে তারা নিয়োগ না পায় সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চাকরিচ্যুতদের আমরা কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখছি।“

এক প্রশ্নের জবাবে সাইদুল ইসলাম বলেন, “কারো বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে আমরা দুদকের সহযোগিতা নেব। শুধু দুদক নয়, যে কোনো সংস্থার কার্যক্রমকে আমরা স্বাগত জানাই। রোহিঙ্গাদের ভোটার করার ব্যাপারে যাদেরই সম্পৃক্ততা পেয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি এবং তা অব্যাহত থাকবে।… এখানে যদি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করতে হয় আমরা তা করব। ফৌজদারি মামলা করতে হলে আমরা তাও করব। “

মহাপরিচালক জানান, রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে ইসি কর্মকর্তাদের বদলি করা হবে, যাতে তারা একই জায়গায় দীর্ঘদিন কাজ করতে না পারে। সেই সঙ্গে নিবন্ধন কর্মকর্তাদের পাসওয়ার্ড যাতে অন্যরা ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য কড়া নজরদারি করা হবে। যদি কেউ হস্তান্তর করে তাহলে সেই ব্যর্থতার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

“রোহিঙ্গারা কোনোভাবে ভোটার হতে পারবে না, কারণ সব ভোটারের হালনাগাদ তথ্য ২০২০ সালের ২ জানুযারি খসড়া আকারে প্রকাশ করা হবে। সব যাচাইবাছাই করেই মূল সার্ভারে যাবে ডেটা। সেক্ষেত্রে ডেটাবেইজ নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই। তথ্যভাণ্ডার পুরোপুরি সুরক্ষিত।

ইসির এনআইডি উইংয়ের  পরিচালক (অপারেশন্স) আবদুল বাতেন; ইসির আইসিটি মেনটেইনেন্স ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ হোসেন, ৫ সদস্যের প্রশাসনিক তদন্ত কমিটির প্রধান এনআইডি উইং পরিচালক খোরশেদ আলম, কারিগরি বিশেষ তদন্ত কমিটির প্রধান এনআইডি পরিচালক ইকবাল হোসেন ও সদস্য এনআইডি উইংয়ের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সাহাব উদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।