সাত দিনের রিমান্ডে যুবলীগ নেতা খালেদ

ঢাকার যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্র ও মাদক আইনের দুই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2019, 02:40 PM
Updated : 19 Sept 2019, 05:15 PM

ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে ক্যাসিনো চালানোর ঘটনায় গ্রেপ্তার খালেদকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে দুই মামলায় সাত দিন করে রিমান্ড চায় গুলশান থানা পুলিশ।

মহানগর হাকিম মাহমুদা আক্তার অস্ত্র মামলার শুনানি নিয়ে খালেদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে মহানগর হাকিম শাহীনুল ইসলামের আদালতে মাদক মামলায় রিমান্ডের শুনানি হয়। এই মামলায় তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।

পর্যায়ক্রমে তার এই রিমান্ড কার্যকর করা হবে বলে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান জানিয়েছেন। অর্থাৎ সাত দিন এই দুই মামলায় খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ।

অস্ত্র আইনের মামলায় রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আদালতে খালেদের আইনজীবী মাহমুদুল হক বলেন, “২০১৭ সাল পর্যন্ত এই অস্ত্রের লাইসেন্স নবায়ন ছিল। তারপর থেকে এর নবায়ন আর করা হয়নি। তিনি ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া কোম্পানির কর্ণধার। তিনি স্বনামধন্য একজন ব্যবসায়ী। লাখ লাখ টাকা উনি সরকারকে আয়কর দেন। তিনি একজন হাজী। তার রিমান্ড চেয়ে আবেদনের অভিযোগ মিথ্যা।”

ঢাকার আদালতে নিতে গুলশান থানা থেকে বের করা হচ্ছে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে। ক্যাসিনো চালানোর ঘটনায় বুধবার গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র ও মুদ্রাপাচার আইনে তিনটি মামলা করে র‌্যাব। ছবি:মাহমুদ জামান অভি

পরে মাদক মামলায় রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, “একই বক্তব্য দিয়ে দুই মামলা করা হয়েছে। পুলিশ কপি পেস্ট করে অভিযোগ দিয়েছে। তাহলে কীভাবে এই মামলার শুনানি করব?।”

আদালতে শুনানিতে আওয়ামী লীগ সমর্থক জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের কাউকে দেখা না গেলেও কয়েকজন কনিষ্ঠ আইনজীবী ছিলেন।

ঢাকা মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে বুধবার সন্ধ্যায় গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার বিকালে তাকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করে র‌্যাব। এরপর তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও মুদ্রাপাচার আইনে তিনটি মামলা দায়ের করা হয় র‌্যাবের পক্ষ থেকে। এছাড়া মতিঝিল থানায়ও তার বিরুদ্ধে মাদকের একটি মামলা করেছে র‌্যাব।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, খালেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক মামলার তদন্ত করবেন তারা। আর মানি লন্ডারিং মামলা তদন্ত ও দেখভাল করবে সিআইডি।

দুই মামলায় রিমান্ডে পেতে সন্ধ্যার দিকে খালেদকে নিয়ে আদালতের উদ্দেশে যাত্রা করেন গুলশান থানার পুলিশ সদস্যরা। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরানো খালেদকে রাত ৮টা ২৫ মিনিটের দিকে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে তোলা হয়।

গুলশান থানা থেকে আদালতের পথে প্রিজন ভ্যানে ঢাকার যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ছবি:মাহমুদ জামান অভি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির প্রভাবশালী নেতা খালেদকে ধরতে অভিযান নামে র‌্যাব।

বুধবার বিকাল থেকে গুলশান ২ নম্বরের ৫৯ নম্বর সড়কে খালেদের বাসা এবং ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে একযোগে অভিযান শুরু করেন র‌্যাব সদস্যরা। শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনিতে বেড়ে ওঠা খালেদ ফকিরাপুলের ওই ক্লাবের সভাপতি।

কয়েক ঘণ্টার অভিযানে ওই ক্লাবে মদ আর জুয়ার বিপুল আয়োজন পাওয়া যায়। সেখান থেকে ২৪ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়।

আর গুলশানের বাসা থেকে খালেদকে গ্রেপ্তারের পর তার বাসায় ৫৮৫টি ইয়াবা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা এবং অবৈধ অস্ত্র পাওয়ার কথা জানায় র‌্যাব।

ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের পাশাপাশি ওই এলাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র এবং বনানীর আহমেদ টাওয়ারে গড়ে তোলা একটি ক্যাসিনোতে র‌্যাবের অভিযান চলে।

এসব অভিযানে মোট ১৮২ জনকে গ্রেপ্তার করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে র‌্যাবের নির্বাহী হাকিম সারোয়ার আলম জানান।

মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুক জানান, আগের দিনের অভিযান নিয়ে বৃহস্পতিবার র‌্যাবের পক্ষ থেকে দুটি মাদক মামলা দায়ের করা হয়েছে। একটি মামলায় খালেদকে আসামি করা হয়েছে। অন্যটি ওয়ান্ডারার্সের তিন কর্মচারীসহ অজ্ঞাত পরিচয় ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।