নূর চৌধুরী: কানাডার আদালতে বাংলাদেশের এক দফা জয়

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর চেষ্টায় এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে কানাডার আদালতের এক রায়ে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2019, 03:46 AM
Updated : 19 Sept 2019, 02:22 PM

মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা কীভাবে কানাডায় বসবাস করছেন, সেই অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য দেশটির সরকারের কাছে চেয়েছিল বাংলাদেশ। 

কিন্তু কানাডার আইনে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত কাউকে প্রত্যর্পণে বাধা থাকায় সে দেশের সরকার ‘জনস্বার্থ রক্ষার’ যুক্তি দিয়ে তথ্য প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল।

এ নিয়ে এক মামলায় কানাডার ফেডারেল আদালত মঙ্গলবার বাংলাদেশের পক্ষে রায় দিয়েছে বলে খবর দিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো।

ফেডারেল আদালতের বিচারক জেমস ডব্লিউ ওরেইলি রায়ে বলেছেন, নূর চৌধুরীর অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে জনস্বার্থের ব্যাঘাত ঘটবে না। সুতরাং তার বিষয়ে বাংলাদেশকে তথ্য না দেওয়ার সিদ্ধান্ত কানাডা সরকারকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধের চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করে একদল সেনা সদস্য; আইন করে বিচারের পথও রুদ্ধ করে দেওয়া হয়।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিচারের পথ খোলে; মামলার পর বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর ফের শ্লথ হয়ে যায় মামলার গতি।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দণ্ডিত পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনকে (আর্টিলারি) ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়।

কিন্তু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খন্দকার আবদুর রশিদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান পলাতক থেকে যান।

তাদের মধ্যে নূর কানাডায় এবং রাশেদ যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। বাকিদের অবস্থান শনাক্ত হয়নি। সবাইকে দেশে ফেরানোর চেষ্টায় ইন্টারপোল থেকে রেড নোটিস জারি করা হলেও তাতে কোনো সুফল আসেনি।

কানাডার দি স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নূর চৌধুরী ও তার স্ত্রী ১৯৯৬ সালে সেদেশে যাওয়ার পর উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয়ের আবেদন করেন। তার দুই বছরের মাথায় নিম্ন আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে নূর চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়।

গুরুতর অপরাধে সংশ্লিষ্টতার তথ্য থাকায় ২০০২ সালে কানাডা নূর চৌধুরী দম্পতির আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। আপিল করেও ২০০৬ সালে তারা হেরে যান। কিন্তু তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়নি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ক্ষমতায় ফেরার পর নূর চৌধুরী বহিষ্কার বা প্রত্যর্পন এড়াতে কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে ‘প্রি-রিমুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট’ এর আবেদন করেন। কোনো অভিবাসন প্রত্যাশীকে দেশে ফেরত পাঠানো হলে তার জীবন ঝুঁকিতে পড়বে কি না- তা বুঝতে ‘প্রি-রিমুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট’ করা হয়। 

এদিকে তাকে ফেরানোর চেষ্টায় থাকা বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে একটি চিঠি দিয়ে জানতে চায় নূর চৌধুরী কানাডায় কীভাবে আছেন। তার ‘প্রি-রিমুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের’ আবেদন কোন পর্যায়ে আছে।

কানাডা সেসব তথ্য দিতে অস্বীকার করলে গত বছর জুন মাসে ‘জুডিশিয়াল রিভিউয়ের’ আবেদন করে বাংলাদেশ। গত মার্চে এ বিষয়ে শুনানির পর মঙ্গলবার বাংলাদেশের আবেদন মঞ্জুর করে রায় দিল কানাডার ফেডারেল আদালত।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বৃহস্পতিবার নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরাতে একটা কমিটি রয়েছে। সেই কমিটির সভাপতি হিসেবে আইনমন্ত্রী কাজ করছেন, সেখানে আমিও একজন সদস্য। আমরা যে কোনো মূল্যে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর খুনি যে যেখানে আছেন তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি।”