আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেনের অনুসারীরাই ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এই হামলা চালায়। তারা নারী আন্দোলনকারীদের লাঞ্ছিতও করে।
তবে সাদ্দাম এ ঘটনায় ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে বিষয়টিকে ‘দুইদল শিক্ষার্থীর মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা’ বলেছেন।
বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনার সময় সহকারী প্রক্টর সীমা ইসলাম ও মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়াসহ প্রক্টরিয়াল টিমের অন্তত ছয়জন সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
মারামারির মধ্যে ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আসিফ মাহমুদ চোখের নিচে আঘাত পান। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়।
পরীক্ষা ছাড়া ছাত্রলীগ নেতাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে ডাকসুর নেতা নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্দোলনকারীরা দুপুরে বাণিজ্য অনুষদের ডিনের কার্যালয় ঘেরাও করতে যান।
ডাকসু নির্বাচনের স্বতন্ত্র জোট, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদসহ কয়েকটি বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
একই সময়ে জগন্নাথ হল, সূর্যসেন হল, মুহসীন হল, জসিমউদ্দীন হল ও বিজয় একাত্তর হলের শতাধিক ছাত্রলীগ কর্মী ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারে সেখানে উপস্থিত হন। সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘বিশেষ সুবিধা’ চালুসহ চার দফা দাবির স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচির কথা বলেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই দল মুখোমুখি হওয়ার পর এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। তারপর দুইপক্ষ হাতাহাতিতে জড়ায়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান বলেন, “আমরা ডিনের কার্যালয় ঘেরাও করতে গিয়েছিলাম। সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। তারা আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। হামলার সঙ্গে জড়িতরা সাদ্দামের অনুসারী।”
আন্দোলনকারীদের ডিন অফিস ঘেরাও কর্মসূচিকে তিনি ‘ষাটের দশকের শিক্ষাবিরোধী’ কর্মসূচির সঙ্গে তুলনা করে বলেন, “আজকে তথাকথিক শিক্ষার্থীদের সংগঠনটির ডিন অফিস ঘেরাও কর্মসূচি ছিল সকাল সাড়ে ১১টায়। কিন্তু তারা সেই সময় কর্মসূচি পালন না করে ১টায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের আরেকটি কর্মসূচির সময় গিয়ে হামলার নামে নাটক সাজায়।”
প্রক্টরিয়াল টিমের সামনে কীভাবে এরকম ঘটনা ঘটল প্রশ্ন করলে প্রক্টর গোলাম রাব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রসুলভ আচরণ আশা করি। হয়ত আরো বড় ঘটনা ঘটতে পারত। কিন্তু আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের যারা ছিলেন, তারা বুঝিয়ে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে আনেন।"
সহকারী প্রক্টরদের সঙ্গে কথা বলে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান প্রক্টর গোলাম রাব্বানী।
তিনি বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের নামে বহিরাগতরাও’ এ ঘটনায় জড়িত বলে তার ধারণা হয়েছে।
পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, “বিগত কয়েক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অশুভ তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো আন্দোলন হলেই প্রশাসন ছাত্রলীগের মাধ্যমে আন্দোলন দমন করছে।”
এ ঘটনাকে ‘ছাত্রলীগের হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করে দোষীদের বিচার দাবি করেন নুর।
পরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় নতুন বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।