থানার কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ার করলেন ডিএমপি কমিশনার

থানায় দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের আচরণ পাল্টানোর নির্দেশ দিয়ে ঢাকার নতুন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, তা না হলে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ওই চেয়ারে বসানো হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2019, 11:22 AM
Updated : 15 Sept 2019, 12:05 PM

ঢাকা মহানগর পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার একদিন পর রোববার মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে অধীনস্ত কর্মকর্তাদের এই বার্তা দেন তিনি।

শফিকুল ইসলাম বলেন, “এখন যারা থানায় কাজ করছেন তাদের আচরণে যদি পরিবর্তন না আসে তা হলে সিনিয়র অফিসাররা থানায় বসা শুরু করবে। আমি নিজে গিয়ে থানায় ওসিগিরি করব, ডিসিদের থানায় বসিয়ে দেব এবং অন্তত সপ্তাহে একদিন সিনিয়র অফিসাররা থানায় বসে মানুষের কথা শুনে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করবে।“

ডিএমপি কমিশনার বলেন, জনগণের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে যা যা করা দরকার তাই করা হবে।

পুলিশের কোনো সদস্য অন্যায় আচরণ করলে তাকে রক্ষার চেষ্টা করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে রোববার সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার নতুন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

“সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশভীতি দূর করার ব্যাপারে এবং নিরাপরাধ মানুষকে হয়রানি বন্ধ করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে,” বলেন তিনি।

শফিকুল ইসলাম শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি সিআইডির প্রধান ছিলেন।

জঙ্গি দমনে পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে নতুন ডিএমপি কমিশনার বলেন, “অনলাইনে জঙ্গিরা যে প্রচারণা চালাচ্ছে সেখানে উদ্বুদ্ধ হয়ে যারা জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে তাদের নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা এখনও আমাদের তৈরি হয়নি। এই সক্ষমতা তৈরির কাজ আমি করব।”

যারা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছে তাদের বুঝিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য যে যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেখানে ত্রুটি আছে। যারা জঙ্গিবাদে জড়ায় সেখানে আহলে হাদিসের লোকজনের জড়িত থাকার কথা বেশি শোনা যায়। সুন্নি কোনো আলেমকে দিয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলে তারা শুনবে না। এখন চেষ্টা করব তাদের মতবাদের মানুষকে দিয়ে বুঝিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে।”

এছাড়াও বাসা-বাড়িতে গিয়ে, মসজিদে ইমামকে দিয়ে, স্থানীয় মুরুব্বিদের দিয়ে জঙ্গিবাদের ক্ষতিকর দিকগুলো বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন, “পরিকল্পিত শহর গড়তে যে পরিমাণ রাস্তা থাকা দরকার সেটার ধারে কাছে নেই আমরা। সহনীয় পর্যায়ে নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

“ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনারদের মাঠে থাকার জন্য নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। অন্তত সকালে অফিস টাইমে তিন ঘণ্টা এবং বাসায় ফেরার সময় বিকালে তিন ঘণ্টা যেন তারা মাঠে থাকেন। তা না হলে আট ঘণ্টা করে উপ- কমিশনারদের মাঠে ডিউটির দায়িত্ব দেওয়া হবে।”

যানজট নিয়ন্ত্রণে নাগরিকদের সহযোগিতা চেয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “আমাদের আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা বাদ দিতে হবে, ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পার না হয়ে রাস্তার মাঝখান দিয়ে পার হওয়া বন্ধ করতে হবে। ট্রাফিক আইন মানতে হবে।” 

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে রোববার সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার নতুন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

অনেক কর্মকর্তার ডিএমপির বিভিন্ন থানায় ঘুরেফিরে বছরের পর বছর ধরে ওসির দায়িত্ব পালন বা অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিন ধরে ডিএমপিতে থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন কয়েকজন সাংবাদিক।

এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, “ঢাকা মহানগরে কাজ করা আর জেলাতে কাজ করার সম্পূর্ণ আলাদা। ঢাকায় কাজ করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা বড় প্রয়োজন। অভিজ্ঞতা না থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

“তবে কারও বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সে ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

অনুষ্ঠানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।