রাব্বানীর অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা: জাবি উপাচার্য

ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‍উপাচার্যের স্বামী ও ছেলের বিরুদ্ধে ‘কমিশন বাণিজ্যের‘ যে অভিযোগ করেছেন তা নাকচ করে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2019, 01:56 PM
Updated : 14 Sept 2019, 01:59 PM

তিনি বলেছেন, “তারা মিথ্যা গল্প ছুঁড়েছে। আমি তাদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলাম। তারা প্রমাণ করুক। এ বিষয়ে আমি তদন্ত করতে বলব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে, মাননীয় আচার্যকে। আমি যাব তাদের কাছে। এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।”

জাহাঙ্গীরনগরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ থেকে কয়েক শতাংশ চাঁদা দাবির অভিযোগ নিয়ে সমালোচনার মুখে রয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও খবর বেরিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক চিঠিতে গোলাম রাব্বানী এ বিষয়ে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে উপাচার্যের স্বামী ও ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।

প্রধানমন্ত্রীকে রাব্বানী লিখেছেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অভিযোগ আপনার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। উপাচার্য ম্যামের স্বামী ও ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে কাজের ডিলিংস করে মোটা অংকের কমিশন বাণিজ্য করেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঈদুল আজহার পূর্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

“এ খবর জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শুরু হয় এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য ম্যাম আমাদের স্মরণ করেন। আমরা দেখা করে আমাদের অজ্ঞাতসারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে টাকা দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তোলায় তিনি বিব্রতবোধ করেন। নেত্রী, ওই পরিস্থিতিতে আমরা কিছু কথা বলি, যা সমীচীন হয়নি। এজন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।”

রাব্বানীর এই চিঠি নিয়ে আলোচনার মধ্যে শনিবার দুপুরে নিজের বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।

তিনি বলেন, “টাকা-পয়সা নিয়ে তাদের (শোভন-রাব্বানী) সাথে আমার কোনো কথা হয়নি। টাকার বিষয়ে তারা আমাকে ইঙ্গিত দিলে আমি বলি, তোমরা টাকা-পয়সা নিয়ে কোনো আলাপ আমার সাথে করবে না। তোমরা যা চাও তা তোমাদের মতো কর। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীও জানেন।

“তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল যে, তারা ঠিকাদারের কাছ থেকে কিছু শতাংশ (টাকা) নিবে। তারা এ বিষয়ে আমাকে ইঙ্গিতও দিয়েছে। কিন্তু আমার কাছে এসে তারা হতাশ হয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠিতে এ বিষয়ে যা লিখেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।”

উপাচার্যের কার্যালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, অধ্যাপক ফারজানার স্বামী মো. আখতার হোসেন পেশায় ব্যবসায়ী। আর ছেলে প্রতীক তাজদিক হোসেন এখন আউটসোর্সিং করছেন।

কোনো ধরনের অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উপাচার্য যেমন অস্বীকার করেছেন, তেমনি এক বিবৃতি পাঠিয়ে উপাচার্যের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

তাহলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা কেন তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করবেন, সে প্রশ্ন করা হয়েছিল উপাচার্য ফারজানা ইসলামকে।

জবাবে তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্যক্রমে শেষ তীরটা হয়ত আমার দিকে থেকে গেল। কি না করেছে সে (রাব্বানী), একজন ছাত্রনেতা, আমাদের ভবিষ্যৎ। শুধু যে এ গল্প (জাহাঙ্গীরনগরে চাঁদা দাবি) তা কিন্তু না। কুষ্টিয়া (ইবি), ঢাবি, জবিতেও ঘটেছে।

“এসব পটভূমিতে দাঁড়িয়ে প্রিয় ছাত্রলীগের পঁচন না ধরে সেজন্য হয়ত প্রধানমন্ত্রী তদন্তও শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষমেশ হয়ত আমার ঘটনা দিয়ে এটা শেষ হয়ে গেল। তারা এখন এসব কথা বলছে অভিযোগ থেকে বাঁচতে।”

দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, “ক্যাম্পাসে আন্দোলনের মাধ্যমে কিছু মানুষ আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে চাচ্ছে। তাই আমি চাই, দুর্নীতি যেই করুক তার তদন্ত হোক। যে বা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান নষ্ট করেছে তার তদন্ত হোক। হয়ত আমার দুর্নীতি বের করতে গিয়ে অন্য কিছু বেরিয়ে আসবে।”