নুসরাতের মা শিরিন আক্তার ও ছোট ভাই রাশিদুল হাসান রায়হান বুধবার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের সামনে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত গত মার্চ মাসে তার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করলে সোনাগাজীর তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন তার জবানবন্দি নিয়েছিলেন।
তার কয়েক দিন পর মাদ্রাসার ছাদে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের গায়ে আগুন দিলে সারাদেশে আলোচনা শুরু হয়। তখন নুসরাতের ওই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হলে গত ১৫ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
রায়হান তার সাক্ষ্যে বলেন, “যৌন হয়রনির মামলা করার পর ওসি মোয়াজ্জেম আইনি সহায়তা দিলে আজ আপুকে পরপারে যেতে হত না।”
আদালতকে রায়হান বলেন, গত ২৭ মার্চ তারা যখন সোনাগাজী থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন, ওসি মোয়াজ্জেম তাদের বাইরে অপেক্ষা করতে বলে নুসরাতকে তার কক্ষে ডেকে নেন।
“ওসির রুম থেকে বের হওয়ার পর আপু কাঁদতে কাঁদতে বলে, ওসি মোয়াজ্জেম তার মুখ ঢেকে রাখা বোরখার আবারণ খুলে আপত্তিকর প্রশ্ন করেছে। মামালা করার পর আমরা চলে আসি। গত ১২ এপ্রিল ফেইসবুকে ভিডিওতে দেখলাম আপুকে আপত্তিকর অনেক প্রশ্ন করা হয়েছে।”
নুসরাতের মা শিরিন আক্তার তার সাক্ষ্যে বলেন, “ওসির রুমের ভেতরে আমাদের ঢুকতে দেয়নি। কিছু সময় পর নুসরাত বের হয়ে আসে। ও জানায়, ওর কথা কেউ একজন ভিডিও রেকর্ড করেছে। পরে সেই ভিডিও ওসি মোয়াজ্জেম মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়।”
সাক্ষ্য দেওয়ার পর তাদের জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ। তিনি দুজনকে ২০ থেক ২৫টি প্রশ্ন করেন।
প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় শিরিন আক্তার মুখে কাপড় দিলে আইনজীবী ফারুক তাকে মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে উত্তর দিতে অনুরোধ করেন। আর সাক্ষীরা আঞ্চলিক ভাষার শব্দ ব্যবহার করতে থাকলে তা বোঝার জন্য আইনজীবী এক প্রশ্নই বার বার করতে থাকেন।
নুসরাতের মা ও ভাইসহ এ মামলার মোট পাঁচজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে এদিন। বিচারক আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন ঠিক করে দিয়েছেন।
মামলার একমাত্র আসামি পুলিশ পরিদর্শক মোয়াজ্জেম হোসেনকেও এদিন কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছিল। নুসরাতের মৃত্যুর পর তাকে প্রথমে সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার এবং পরে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা গত ২৭ মে অভিযোগপত্র দিলে ওই দিনই তা গ্রহণ করে আসামি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারক।
বেশ কিছুদিন লাপাত্তা থাকার পর গত ১৬ জুন আগাম জামিনের জন্য হাই কোর্টে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার হন মোয়াজ্জেম। পরে ঢাকার সাইবার ট্রাইবুনাল জমিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠায়।
গত ১৭ জুলাই অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ আদালতেই তার বিচার শুরু হয়।