ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু ছড়ানো বিচিত্র নয়: তাজুল

এ বছর রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গু যেভাবে ছড়িয়ে, সেটি বিচিত্র কিছু নয় বলে মনে করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2019, 12:48 PM
Updated : 11 Sept 2019, 12:48 PM

বুধবার গাবতলীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাঁচাবাজার পরিচ্ছন্নতার জন্য আনা নতুন যন্ত্রপাতি পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি আগে থেকেই তাদের চিন্তায় ছিল।

এ বছর ডেঙ্গুর মৌসুমের শুরতে মশাবাহিত রোগটি রাজধানীবাসীর মধ্যে অঅতঙ্ক ছড়ালে ক্রমেই তা সারাদেশে বিস্তার লাভ করে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ এসেছে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে।

কীটতত্ত্ববিদদের ভাষ্য, ডেঙ্গু রোগের জন্য দায়ী দুটি মশার একটি এইডিস অ্যালবোপিকটাস। এই মশা গ্রামে বেশি থাকে। এবার ‘উপযোগী পরিবেশ’ পাওয়ায় এইডিস ইজিপ্টির পাশাপাশি এই মশাও রোগটা ছড়িয়েছে।

এ কারণে আগামীতে ঢাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাইরে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা জানিয়ে তারা বলছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখন থেকে গ্রাম পর্যায়েও কার্যক্রম চালাতে হবে।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, “ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হওয়ায় সরকার ঢাকাকে নিয়েই কাজ করেছে বেশি। ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে বিভিন্ন উপশহরে ছড়িয়ে পড়াটা বিচিত্র কিছু নয়।

“এ বিষয়টাকে আমরা আগে থেকেই মাথায় রেখেছি। গ্রামে-গঞ্জে মানুষ যেখানে থাকে সেখানে প্রাদুর্ভাব হতে পারে। এজন্য আমরা সারা বাংলাদেশকে সচেতন করছি। আমরা বছরব্যাপী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি।”

দেশের পৌরসভাগুলো লোকবল, অর্থ বরাদ্দসহ নানা সমস্যায় ভুগছে, এ অবস্থায় পৌরসভাগুলোর জন্য ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কতটা চ্যালেঞ্জিং-এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “স্বাভাবিকভাবে এই চ্যালেঞ্জ তো সারা পৃথিবীতেই। আমাদের পৌরসভাগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা তাদের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছি।

“পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি করেছিলেন। তাদের বলেছি, আপনারা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করার কথা বলেন আর নির্ভর করবেন সরকারের ওপর, তা তো হয় না। পৌরসভাগুলোকে শক্তিশালী হতে হলে নিজস্ব আয় বাড়াতে হবে। এখন মানুষের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলারের ওপরে। আমি মনে করি এই দেশের পৌরসভাগুলোর পরনির্ভরশীল হওয়ার কোনো কারণ নেই।”

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কম মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

“এইডিস মশাবাহিত এই রোগে আমেরিকাতে গত এক বছরে এক হাজার লোক মারা গেছে। ইউরোপে আছে, এশিয়ার ডেভেলপড কান্ট্রিগুলোয় ছিল, আছে। জাপানে আছে, ইউরোপে আছে। ফিলিপাইনের লোকসংখ্যা আমাদের অর্ধেকের কম। তাদের আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ। তাদের সরকারি হিসেবে ৪৯০ জন (সবশেষ হিসাব অনুযায়ী ১০২১ জন) মারা গেছেন।

“যেখানে আমাদের এখানে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজার আক্রান্তের মধ্যে ৪৭ জন মারা গেছেন (১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৭৮ হাজার ৬১৮ জন, মৃত্যু ৬০ জনের)। সে হিসাবে ডেঙ্গুতে আমাদের এখানে মৃত্যুর হার কম।”

ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ, চিকিৎসকরা অনেক বেশি ভালো উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সিঙ্গাপুরের লোকসংখ্যা মাত্র ৫০ লাখ, আমাদের ১৬ কোটি। তো সেখানে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার পর্যালোচনা করে আমার মনে হয় যে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দায়িত্ব অনেক ভালোভাবে পালন করেছে।”

এ সময় ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম জানান, এইডিস মশার প্রজননস্থল ধংসে উত্তর সিটি করপোরেশনের চিরুনি অভিযানের দ্বিতীয় ধাপ আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর শুরু হবে।

তিনি বলেন, অভিযানের প্রথম পর্বে ‘অনেক চ্যালেঞ্জ’ মোকাবেলা করতে হয়েছে। তবে অনেকে স্বাগতও জানিয়েছে।

তিনি বলেন, “ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা ইনটিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আমরা কাজ করছি। আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত কি কি কাজ করব তার একটি গাইডলাইনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেব।

“ইনটিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্টের মধ্যে থাকবে চতুর্থ প্রজন্মের ওষুধ। আমরা ভেহিকল মাউনটেইন ফগার মেশিন আনব। বর্তমানে যারা পায়ে হেঁটে যায় তারা ৪০ মিনিট একটি ফগার মেশিন চালাতে পারে। নতুন মেশিন একটানা সাড়ে তিন ঘণ্টা ফগিং করতে পারবে।”

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাইসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।