রোহিঙ্গাদের আগে ফেরান, ঘরবাড়ি তারাই বানাবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মিয়ানমারে আশ্রয়কেন্দ্র বানানোর জন্য সময়ক্ষেপণ না করার আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের আগে ফিরিয়ে নিতে হবে, সেখানে গিয়ে তারাই ঘরবাড়ি বানিয়ে নেবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2019, 11:24 AM
Updated : 11 Sept 2019, 11:24 AM

ঢাকার আগারগাঁওয়ের পিকেএসএফ ভবনে বুধবার এক সেমিনারের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে পারে, সে পরিবেশ মিয়ানমারকেই তৈরি করতে হবে।

২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনের ওই এলাকায় সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর থেকে সোয়া সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

সেনাবাহিনীর ওই অভিযানকে জাতিসংঘ বর্ণনা করে আসছে জাতিগত নির্মূল অভিযান হিসেবে। তবে সেখানে গণহারে হত্যা-ধর্ষণ-জ্বালাওপোড়াওয়ের অভিযোগ মিয়ানমার অস্বীকার করে আসছে।

মিয়ানমার বলে আসছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে তারা প্রস্তুত। কিন্তু গত মাসে প্রত্যাবাসনের দ্বিতীয় দফা চেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে গেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কথায় রোহিঙ্গারা আস্থা রাখতে না পারার কারণে। 

রোহিঙ্গাদের দাবি, প্রত্যাবাসনের জন্য আগে তাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। জমি-জমা ও ভিটেমাটির দখল ফেরত দিতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাখাইনে তাদের সঙ্গে যা হয়েছে, সেজন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অন্যদিকে মিয়ানমার প্রত্যাবাসন শুরু করতে না পারার জন্য বাংলাদেশকে দুষছে।

সম্প্রতি মিয়ানমার সরকারের ব্যবস্থাপনায় রাখাইনের কয়েকটি এলাকা ঘুরে এসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রতিবেদক জোনাথন হেড।

তিনি লিখেছেন, রাখাইনের রোহিঙ্গা গ্রামগুলো গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে পুলিশ ব্যারাক ও বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রত্যাবাসনের জন্য যে দুটি ট্রানজিট ও রিলোকেশন ক্যাম্প মিয়ানমার সরকার বানিয়েছে, সেগুলো তৈরি করা হয়েছে রোহিঙ্গা গ্রাম মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “রোহিঙ্গাদের জন্য ঘরবাড়ি বানানোর দরকার নেই, আগে তাদের ফিরিয়ে নিন।… রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু বাড়িঘর মিয়ানমার সরকার তৈরি করেছে, সেখানে আসলে কী অবস্থা হয়েছে তা দেখাতে আমাদের রাষ্ট্রদূতসহ বিদেশি কূটনীতিকদের নিয়ে যাবে, আগে কোনদিন রাজি ছিল না এখন রাজি হয়েছে।“

প্রত্যাবাসন শুরু করতে ব্যর্থতার জন্য বাংলাদেশকে দায়ী করে মিয়ানমার সরকারের বক্তব্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তারা এটা বলছে কারণ আমাদের দিক থেকে রোহিঙ্গারা যায়নি। আমরা কাউকে জোর করে ফেরত পাঠাব না, তারা স্বেচ্ছায় ফেরত যাবে। পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব মিয়ানমারের; তারা তাদের লোকগুলোকে কনভিন্স করতে পারেনি।”

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বহু মানুষের ভারতে আশ্রয় নেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যখন ভারত থেকে আসি, আমরা চিন্তা করি নাই আমাদের ঘরবাড়ি আছে কিনা। পাকিস্তানি আর্মি আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলেছিল, আমরা এসে ঘরবাড়ি তৈরি করেছি।

“রোহিঙ্গারাও যখন আমাদের এখানে এলো, তারাও কিন্তু ঘরবাড়ির কথা চিন্তা করে নাই। পালিয়ে আসছে। যখন তাদের যাওয়া শুরু হবে, গিয়ে সেখানে ঘরবাড়ি তৈরি করে নেবে, না গেলে কীভাবে হবে?”

রোহিঙ্গাদের যেহেতু শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হয়নি, তাহলে বাংলাদেশ ‘স্বেচ্ছায়’ ফিরে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব কেন দিচ্ছে- এ প্রশ্নে মোমেন বলেন, “আমরা (ইউএনএইচসিআর, ইউএনডিপির সঙ্গে) একটা এগ্রিমেন্ট সই করেছিলাম যে, আমরা কাউকে জোর করে ফেরত পাঠাব না। সেটাতেই আমরা আছি। আমরা চাই রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফিরুক। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয় ফিরে যাক।”

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।