পরীক্ষা ছাড়া ভর্তি ছাত্রদের ‘হেল্প করতে’: ঢাবি ডিন

পরীক্ষা ছাড়া ছাত্রলীগ নেতাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে ডাকসুর নেতা নির্বাচিত হওয়ায় সুযোগ করে দেওয়ায় উপাচার্য ও বাণিজ্য অনুষদের ডিনের দিকে অভিযোগের যে আঙুল উঠেছে, সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন দুজনই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2019, 07:44 PM
Updated : 8 Sept 2019, 07:44 PM

বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলছেন, শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যেই শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করিয়েছিলেন তিনি।

আর এক্ষেত্রে চিরকূট পাঠিয়ে সুপারিশ করার অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।

রোববার দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি হয়ে ডাকসু নেতা’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোসণার পর ছাত্রলীগের ৩৪ জন বর্তমান ও সাবেক নেতা ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে ভর্তি বিজ্ঞাপন, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি হন।

তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের বিভিন্ন সম্পাদক ও সদস্য পদে মোট আটজন নির্বাচনে অংশ নেন, বিজয়ী হন সাতজন। এছাড়া হল সংসদের ভিপি পদে অংশ নেন দুজন। এরমধ্যে একজন নির্বাচিত হন।

এই খবর প্রকাশের পর রোববার বিকালে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে একদল শিক্ষার্থী উপাচার্য এবং বাণিজ্য অনুষদের ডিনের পদত্যাগসহ ভর্তি পরীক্ষা না দিয়েই ভর্তি হয়ে নির্বাচিত ডাকসু নেতাদের পদ শূন্য ঘোষণা করে নতুন নির্বাচনের দাবি করেছেন।

পরীক্ষা না নেওয়ার বিষয়ে অধ্যাপক শিবলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখানে দুইবার ভর্তি পরীক্ষা দেবে কেন? আমাদের ফ্যাকাল্টির ছাত্ররা ব্যাংক, ইন্সুরেন্স কোম্পানি, কর্পোরেটে (মাস্টার্স শেষে) সাথে সাথে চাকরি পেয়ে যাচ্ছে। আর কিছু আছে যারা আর্থিকভাবে টেনেটুনে চলে, ওরা পড়াশোনা কন্টিনিউ করতে পারে না, (স্নাতক শেষে) চাকরি নিতে বাধ্য হয়। ওরা চাকরি নিয়ে এখানে রাতে এসে পড়ে।

“এগুলো তো আমাদের উৎসাহ দিতে হবে। এদের নিরুৎসাহিত করলে তো দেশের ক্ষতি হয়ে যাবে। আমার ছাত্র, আমাদের এখানকার ছাত্র, তার অসুবিধা, তাকে আমার হেল্প করতে হবে না? সেটার জন্য কেউ আমার বদনাম করলে করুক। আমি আমার ছাত্রকে হেল্প করবই।”

অধ্যাপক শিবলী বলেন, “আমরা ফ্যাকাল্টিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমাদের শিক্ষার্থী যারা চাকরি-বাকরি, আর্থিক অস্বচ্ছলতা বা কোনো কারণে চাকরিতে ঢুকে যায়, ওরা যদি ইভিনিংয়ে মাস্টার্স করতে চায়, আমরা ওদের অনুমোদন দেব। আর বাইরের যারা, ওদের জন্য ভর্তি পরীক্ষা হবে।”

ওই শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে ভর্তি করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “যারা সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেছে, তাদের শুধু একটা মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ দিই। এটা তো দোষের কিছু না।”

চিরকূটের মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার অভিযোগ ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেন তিনি।

উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনি (অধ্যাপক শিবলী) আমাকে প্রাথমিকভাবে এতটুকু বলেছেন যে, এটি নিয়মের মধ্যে তারা করছে এভাবে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা গ্র্যাজুয়েট, তাদেরকে নাকি তারা ভর্তি করে। আমি বলেছি, সেগুলো আপনারা স্পষ্ট করেন। আপনারা নিয়মের বাইরে কোনোক্রমেই যেতে পারবেন না।

“বিকেলে এটা নিয়ে অফিসিয়ালি বললে তিনি আমাকে বলেছেন যে, স্যার আমি সিরিয়াসলি দেখতেছি বিষয়টা।”

চিরকূটের মাধ্যমে ওই ছাত্রলীগ নেতাদের ভর্তি করানোর সুপারিশ করেছেন কি না- জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর কাউকে ভর্তি করাতে পারেন না। চিরকুট,ভর্তি এগুলো দিতে পারেন না।

“আমার কাছে সবাই ছাত্র। আমার কাছে কত মানুষ কাজের জন্য আসে। কত ছাত্র, কত জন কত দরখাস্ত দেয়। নিয়ম অনুযায়ী সম্ভাব্য উপায়ে সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় প্রেরণ করতে হয়। কিন্তু কোনো চিরকুটের মাধ্যমে ভর্তির বিধান! আমি এই শব্দটাই এখন নতুন শুনলাম।”

এদিকে এই ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন।

সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই তাদের (ছাত্রলীগ নেতাদের) এই ছাত্রত্ব বজায় রাখার অপপ্রয়াস দেখা দিয়েছিল, যদিও লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা ব্যতিরেকে এইভাবে সুপারিশের মাধ্যমে ভর্তি হওয়া স্পষ্টত বিশ্ববিদ্যালয়ের কানুনের লঙ্ঘন।

“আমরা আগে থেকেই বলে এসেছি, ভোট ডাকাতি আর গুণ্ডামীর মধ্য দিয়ে যাদের নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে হয়, তারা ছাত্রসমাজের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। আমাদের কথা আবারও প্রমাণিত হলো। আমরা আশা করবো, বিশবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই ভর্তি জালিয়াতির মূল হোতাদের খুঁজে বের করবেন।”