নির্বাচন ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ইভিএমের ক্ষয়ক্ষতি

অগ্নিকাণ্ডে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেইজের কোনো ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছেন ইসি কর্মকর্তারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2019, 06:43 PM
Updated : 8 Sept 2019, 08:19 PM

ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রধান ভবনে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।

১২ তলা বিশিষ্ট এই ভবনের বেইজমেন্টে রোববার রাত ১১টার দিকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে।

ওই বেইজমেন্টে ইভিএম থাকার কথা জানিয়েছেন শেরে বাংলানগর থানার ওসি জানে আলম মুন্সী।

ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডে কিছু ইভিএমের ক্ষতি হতে পারে।

আগুন লাগার খবর পেয়ে রাত সোয়া ১১টার দিকে ফায়ার ব্রিগেড নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে বলে বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার ফরহাদ উল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাত ১১টা ৬ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। এটা বড় ধরনের আগুন নয়, মোটামুটি ছোট্ট অগ্নিকাণ্ড।”

প্রথমে ৬টি ইউনিট কাজ শুরু করলেও পরে আরও ছয়টি ইউনিট এই কাজে যোগ দেয়।

এক ঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার সাইদুল।

রাত ১২টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার কথা বলা হলেও ধোঁয়া উড়ছিল।

রাত ১২টা ২৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কর্তব্যরত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান।

তিনি বলেন, “আগুন কিভাবে লেগেছে এবং ক্ষতি কী পরিমাণ হয়েছে, তা তদন্তের পর জানা যাবে।” 

সাইদুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইভিএমের কিছু ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র ও অগ্নিকাণ্ডের কারণ বিষয়ে পরবর্তীতে খোঁজ নেব।”

তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শর্ট সার্কিট থেকে এর সূত্রপাত। বড় ধরনের শঙ্কা করছি না আমরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।”

নির্বাচন ভবনের বেইজমেন্টে ‘ইভিএম সংরক্ষণে’র বিশেষ ব্যবস্থার গুদাম রয়েছে। ভবনের ১১ তলার জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেইজ।

ব্রিগেডিয়ার সাইদুল বলেন, “ভোটার ডেটাবেইজের কোনো ক্ষতি হবে না।”

অগ্নিকাণ্ডের ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে এনআইডি জিডি ও ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা নির্বাচন ভবনে উপস্থিত হন। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রশিক্ষিত লোকবল কাজে নামে।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারও মধ্যরাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন।

এর আগে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাশের ভবনে আগুন লাগায় ইসির এনআইডি সেবা বিঘ্ন ঘটেছিল।

দুটি তদন্ত কমিটি গঠন

ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন সাংবাদিকদের জানান, অগ্নিকাণ্ড তদন্তে নির্বাচন কমিশন ও ফায়ার সার্ভিস আলাদা দুটি কমিটি গঠন করেছে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

দেবাশীষ বলেন, “বেইজমেন্টে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ৫০০ ইভিএম ছিল। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা যায়নি; এটা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জানা যাবে।”

বেইজমেন্টে ইভিএমের পাশাপাশি কাগজের কার্টনও ছিল বলে ধোঁয়া বেশি হয়েছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা।

বেইজমেন্টে ইভিএমের পাশাপাশি কাগজের কার্টনও ছিল বলে ধোঁয়া বেশি হয়েছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা।

অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র সচল ছিল কি না?

এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, আধুনিক এ ভবনে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র সচল ছিল কি না, সে বিষয়ে অবগত নন তিনি।

“তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর দুপুরের মধ্যে ইসির নিজস্ব কমিটি প্রতিবেদন দেবে। তদন্ত কমিটি জানাবে এ ভবনের নিচ তলায় অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র সচল ছিল কি না? এ মুহূর্তে বিষয়টি আমার জানা নেই।”

দমকল বাহিনী আসার আগে ইসির অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল কি না, বিদ্যমান ব্যবস্থা কাজ করেছে কি না বা কোনো কাজে লেগেছে অথবা গাফলাতি ছিল কিনা তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

মাহবুব তালুকদার জানান, তদন্ত কমিটির অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ, কীভাবে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে এবং আগামীতে যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার রাত দেড়টায় নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সামনে আসেন।

খুব দ্রুততার সঙ্গে দমকল বাহিনী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে, বলেন তিনি।

মাহবুব তালুবকদার বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা দেশের বাইরে অবস্থান করলেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শুনে খোঁজ-খবর রাখছেন।