স্মার্ট কার্ড: তিন বছরে বিতরণ মাত্র ৩০%

ভোটারদের জন্য উন্নতমানের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ শুরুর পর তিন বছরে মাত্র ৩০ শতাংশ ভোটারের হাতে স্মার্ট কার্ড তুলে দিতে পেরেছে নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2019, 06:14 AM
Updated : 7 Sept 2019, 06:16 AM

নয় কোটি নাগরিককে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিস’ (আইডিইএ) প্রকল্পের আওতায় এ পরিচয়পত্র মুদ্রণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালের অক্টোবরে। এরপর ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর শুরু হয় বিতরণ।

গত জুলাইয়ে স্মার্ট কার্ড বিতরণ সংক্রান্ত সর্বশেষ সভার কাযবিবরণীতে জানানো হয়, এ পর্যন্ত ৪ কোটি ৬০ লাখ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। তার মধ্যে ৩ কোটি ৩৩ লাখ পরিচয়পত্র নাগরিকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাচন অফিসে অনেক কার্ড রয়ে গেছে, যেগুলো বিতরণ করা হয়নি বা নাগরিকরা নিতে আসেননি। এছাড়া নাগরিকের তথ্য না মেলায় অনেক স্মার্ট কার্ড মুদ্রণ সম্ভব হয়নি।

ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিদেশি সংস্থার সহযোগিতায় আমরা কাজ শুরু করেছিলাম। এখন নিজেরাই উৎপাদন করেছি। সব ধরনের জটিলতা কাটিয়ে মুদ্রণ ও বিতরণ কাজ দ্রুততর করার চেষ্টা চলছে। ২০২০ সালের মধ্যে সব ভোটারের হাতে স্মার্ট কার্ড পৌঁছে দিতে পারব আশা করি।”

তিন বছরে যখন বিতরণের অগ্রগতি ৩০ শতাংশ, সেখানে দেড় বছরে বাকি ৭০ শতাংশ কার্ড দেওয়া সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সময়ই তা বলে দেবে।”

প্রকল্পের শুরুতে নয় কোটি ভোটারকে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার লক্ষ্য থাকলেও ভোটার সংখ্যা এখন বেড়ে হয়েছে ১০ কোটি ৪২ লাখের বেশি। হালনাগাদে ২০২২ সালের মধ্যে আরও ৮০ লাখ ভোটার যোগ হবে তালিকায়।

সাইদুল ইসলাম বলেন, “প্রথম দিকে কাজটি করতে গিয়ে সমস্যা হয়েছে; এখন কাটিয়ে উঠেছি। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে, মুদ্রণ কাজ এগিয়ে রাখা হচ্ছে। বিতরণ না হওয়া কার্ড ক্র্যাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে উপজেলা-সিটি এলাকার নাগরিকদের হাতে পৌঁছানো হবে।”

ইসি কর্মকর্তারা জানান, যেসব নাগরিকের ভোটার তথ্য পুরোপুরি পাওয়া যায়নি বা ঠিকানা মেলেনি, তাদের স্মার্ট কার্ড মুদ্রণের কাজটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা সম্ভব হয়নি। সেগুলো পর্যালোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আলাদা বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপির সহায়তায় ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিস (আইডিইএ)’ প্রকল্পের আওতায় ২০১১ সালের জুলাইয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার চুক্তি করেছিল ইসি।

এরপর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান অবার্থুর টেকনোলজিসের সঙ্গে ৮০০ কোটি টাকায় স্মার্টকার্ড উৎপাদন ও বিতরণের চুক্তি হয়।

প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের জুনে। পরে মেয়াদ ১৮ মাস বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

কিন্তু ফ্রান্সের ওই কোম্পানির কাজে দেরি দেখে অপেশাদারিত্বের অভিযোগ এনে ২০১৭ সালে ইসি তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

ফরাসি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল হওয়ার পর প্রকল্পে অর্থায়নে অনাগ্রহ দেখায় বিশ্ব ব্যাংক।

সরকারি অর্থায়নে এখন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি।