ঢাকা উত্তরের অর্ধেক বাড়িতেই ‘এইডিস জন্মানোর পরিবেশ’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রায় ৭৪ হাজার বাড়ি ও স্থাপনা ঘুরে দেখে ২ দশমিক ০৯ শতাংশ বাড়িতে এইডিস মশার লার্ভা পেয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মীরা।

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2019, 08:34 AM
Updated : 1 Sept 2019, 08:58 AM

আর ৫৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ বাড়ি ও স্থাপনায় এইডিস মশার ‘প্রজনন উপযোগী পরিবেশ’ দেখতে পাওয়ার কথা বলেছেন তারা।

রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পর গত ২৫ অগাস্ট থেকে ঢাকা উত্তরের প্রতিটি বাড়িতে এইডিস মশার লার্ভার খোঁজে ‘চিরুনি অভিযান’ শুরু হয়।

‘এইডিস মশা ধ্বংসকরণ ও বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান’ নামের এই কর্মসূচিতে ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত সাত দিনে ৩৬টি ওয়ার্ডের ৭৩ হাজার ৮১৫টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করেন কর্মকর্তারা।

অভিযানের সময় ১ হাজার ৫৪০টি বাড়ি ও স্থাপনায় এইডিস মশার লার্ভা খুঁজে পাওয়া যায়, যা পরিদর্শন করা মোট বাড়ির ২ দশমিক ০৯ শতাংশ।

এ ছাড়া ৩৯ হাজার ৫৯৯টি বাড়ি ও স্থাপনায় এইডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী স্থান এবং দীর্ঘদিন জমে থাকা পানি পাওয়া যায়। এই সংখ্যা মোট পরিদর্শন করা বাড়ির ৫৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

শনিবারও উত্তর সিটির ৩৬টি ওয়ার্ডের ১০ হাজার ৫৩৮টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। এ সময় ১৬২টি বাড়ি ও স্থাপনায় এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। সেখানে ‘এ বাড়ি/স্থাপনায় এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে’ লেখা স্টিকার লাগিয়ে দেন তারা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে হোল্ডিং নম্বরধারী বাড়ি বা স্থাপনা আছে মোট ২ লাখ ৪০ হাজার। সব বাড়িতেই এ অভিযান চালানো হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।   

অভিযানে সম্পৃক্ত সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, মানুষের ‘সচেতনতা অভাব ও দায়িত্বহীনতাই’ এইডিস মশার বিস্তারের বড় কারণ।

উত্তর সিটির আওতাধীন গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরার মত অভিজাত এলাকায় এইডিসের লার্ভা ও মশার প্রজননের উপযোগী পরিবেশ বেশি পাওয়া গেছে বলে জানান উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বেশিরভাগ বাড়ির বাসিন্দারাই এইডিসের প্রজননস্থল নিয়ে ভুল ধারণা পোষণ করেন।

“এসব এলাকার বাড়িগুলোতে বাড়ি সাজানোর উপকরণ, ফুলের টব ব্যবহার করা হয় অনেক বেশি। অনেক বাড়ির ছাদে ফুলের টবে জমে থাকা পানিতে এইডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। এছাড়া অনেক ছাদের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।”

বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে মালিকের সংখ্যা বেশি থাকে। এ কারণে পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব কার- এ নিয়ে টানাপড়েনের কারণেও এসব বাড়িতে এইডিসের জন্ম হচ্ছে বলে মনে করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ।

“দেখা গেছে, যেসব বাড়িতে এরকম পরিবেশ পাওয়া গেছে, তাদের অনেকেরই ধারণা, রাস্তার পাশের নালায় এইডিস মশার জন্ম হয়। আবার একাধিক ফ্ল্যাট মালিকদের মধ্যে যোগাযোগ কম, কে বাড়িটি পরিচ্ছন্ন রাখবে- তা নিয়ে সমন্বয়হীনতা আছে। এই সুযোগে এইডিস মশা জন্ম নিচ্ছে।”

উত্তরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছেন ডিএনসিসির অঞ্চল-১ এর নির্বাহী কর্মকর্তা জুলকার নাইন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বেশিরভাগ বাড়ির ছাদ এবং বেইজমেন্টে এইডিসের লার্ভা ও প্রজনন উপযোগী পরিবেশ দেখেছেন তিনি।

“ছাদ ও বেইজমেন্ট এই দুটো জায়গায় আমরা এইডিসের লার্ভা বেশি পাচ্ছি। অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা আছে। আবার অনেকে জানার পরও বিষটায় গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাদের ঘরেই যে এইডিস মশা জন্ম নিচ্ছে এটা তারা বুঝতে চাচ্ছে না।”

এ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের নাগরিকরা অসচেতন নয়। কিন্তু আমার মনে হয় ইচ্ছার অভাব আছে।

“আমরা সবাই জানি-বুঝি যে এটা করতে হবে। কিন্তু এটা করা যে আমার একটা নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, এই জায়গাটায় আমাদের অনেক ঘাটতি আছে। অনেকের নলেজ আছে, কিন্তু অ্যাটিচিউড নাই, আবার অনেকের নলেজ, অ্যাটিচিউড আছে কিন্তু প্র্যাকটিস নাই।”

তবে পরিস্থিতি ধীরে হলেও পাল্টাচ্ছে জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মামুন বলেন, “আমরা এখন সচেতনতার জন্য যে কাজগুলো করছি, এটা যদি আরও পাঁচ বছর আগে শুরু করতাম, তাহলে হয়ত আজকের এ অবস্থা হত না। কিন্তু এ বছর থেকেই আমরা পুরোদমে শুরু করেছি, আমার মনে হয় আমাদের কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু সচেতনতা বাড়বে আস্তে আস্তে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত সারা দেশে ৭০ হাজার ১৯৫ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে অগাস্টেই ভর্তি হয়েছেন ৬৫ হাজার ১৫০ জন।

সরকারিভাবে ‘ডেথ রিভিউ’ প্রক্রিয়া শেষে ৫৭ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যুর তথ্য এ পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয়েছে।  তবে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও জেলার চিকিৎসকদের কাছ থেকে অন্তত ১৯০ জনের মৃত্যুর তথ্য এসেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে।