রোহিঙ্গা সঙ্কট: কফি আনানের সুপারিশের বাস্তবায়ন চায় ওয়াশিংটন

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের জন্য রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে কফি আনান নেতৃত্বাধীন পরামর্শক কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2019, 03:23 PM
Updated : 25 August 2019, 04:14 PM

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পড়িনের মুখে ভয়াবহ এই শরণার্থী সঙ্কট সৃষ্টির দুই বছর পূর্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের এই আহ্বান এলো।

সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা; এই সংখ্যা কিছু দিনের মধ্যে সাত লাখ ৪০ হাজার ছাড়ায়। আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কথায় নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ এবং গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার ভয়াবহ বিবরণ উঠে আসে। জাতিসংঘ ওই অভিযানকে বর্ণনা করে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে।

২০১৬ সালের অক্টোবরে রাখাইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলার পর সেনা অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি।

এক বছরের তদন্ত শেষে কফি আনান যেদিন সু চির হাতে প্রতিবেদন দেন, সেই রাতেই রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় ফের হামলা হয় এবং তার জবাবে নতুন করে অভিযান আর দমন-পীড়ান শুরু করে সেনাবাহিনী।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মর্গান ওরতেগাস এক বিবৃতিতে বলেন, এই অগাস্টে কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনেরও দুই বছর পূর্ণ হল। ওই প্রতিবেদনে কমিশন রাখাইনে ‘প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য’ দেখতে পাওয়ার কথা জানায়, যা আজও বিদ্যমান।

“ওই পরামর্শক কমিশন যেসব সুপারিশ করেছিল, আমরা তা বাস্তবায়ন করতে বার্মা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। বার্মা আর রাখাইনের মানুষের জন্য, যারা পালিয়ে গেছে- তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো কী হতে পারে, সেই পথই দেখানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।”   

সব হারিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “রোহিঙ্গারা যাতে তাদের জন্মভূমি অথবা নিজেদের পছন্দমত জায়গায় স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদার সঙ্গে ফিরতে পারে এবং বসবাস করতে পারে, সেই পরিবেশ তৈরির জন্য মিয়ানমারকে তাগাদা দিতে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাব।”  

রাখাইনে যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা উত্তেজনা প্রশমনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বসহ অন্যান্য নাগরিক অধিকার দেওয়ার সুপারিশ করা হয় কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, রাখাইন মিয়ানমারের একমাত্র রাজ্য নয়, যেখানে সে দেশের সেনাবাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে। আর এই অবস্থা চলছে গত সত্তর বছর ধরে।

“জবাবদিহিতার অভাব চলতে থাকলে এবং সামরিক বাহিনীর অনিয়ম বেসামরিক প্রশাসন এড়িয়ে যেতে থাকলে রাখাইনের পাশাপাশি কাচিন আর শানসহ অন্যান্য রাজ্যেও নিপীড়নের ঘটনা অব্যাহত থাকবে।”    

বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা মানবাধিকারের প্রতি পূর্ণ সম্মান দেখাতে, মানবিক সময়তা পৌঁছে দেওয়ার নিরবচ্ছিন্ন সুযোগ দিতে এবং শান্তির স্বার্থে আলোচনা অব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই।

“শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে যে বদন্যতা বাংলাদেশ দেখিয়ে যাচ্ছে, আমরা তাকে স্বাগত জানাই।”

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৫৪ কোটি ২০৯ লাখ ডলারের মানবিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদেরও এ বিষয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে।

সেখানে বলা হয়, “বার্মায় শক্তিশালী, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ গণতন্ত্রের জন্য সুবিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। রোহিঙ্গারা যাতে স্বেচ্ছায় ফিরতে পারে, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা অন্যদেরও সহযোগিতা করার আহ্বান জানাই।”