দুর্নীতি রোধে ব্যর্থতার দায় আমি এড়াতে পারি না: সৈয়দ ইফতেখার

দুর্নীতি দমন কমিশনে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার পর সাবেক কারা মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজনস) সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেছেন, চট্টগ্রাম কারাগারের দুর্নীতি রোধে ব্যবস্থা না নিতে পারা এক ধরনের ‘প্রশাসনিক ব্যর্থতা’ এবং তিনি এর দায় এড়াতে পারেন না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2019, 02:48 PM
Updated : 25 August 2019, 02:48 PM

চট্টগ্রাম কারাগারের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে সাবেক এই কারা প্রধানকে রোববার প্রায় তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফ ও উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন আহমেদ।

অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) থাকা সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারা জানেন, দুটি দুর্ঘটনা ঘটল। সেগুলোর কারণে উনারা (দুদক) তদন্ত করছেন। সেটা তদন্ত করে দুদক মতামত দেবে। মূলত তাদের ব্যাপারে আমার কী কথাবার্তা আছে, আমি সেগুলো বলেছি।"

চট্টগ্রাম কারাগারের 'অনিয়ম-দুর্নীতি' বন্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারাকে ‘ব্যর্থতা’ হিসেবে স্বীকার করে সাবেক এই কারা মহাপরিদর্শক বলেন, “সংস্থার প্রধান হিসেবে আমি দায় এড়াতে পারি না। এটা আমার প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলা যেতে পারে।”

দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম কারাগারের নানা অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে ইফতেখার উদ্দিনের বক্তব্য শুনেছেন তারা।

এর আগে চট্টগ্রামের সাবেক জ্যেষ্ঠ জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিককেও এ বিষয়ে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

গত দুই বছরের মধ্যে দুইজন কারা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বড় ধরনের দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, যারা এক সময় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে দায়িত্বরত ছিলেন।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম কারাগারের সাবেক ডিআইজি-প্রিজনস পার্থ গোপাল বণিকের (পরে সিলেট কারাগারের ডিআইজি) ঢাকার ভূতের গলির বাসা থেকে গত ২৮ জুলাই ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করে দুদক। ওই সময়ই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ঘটনায় ২৯ জুলাই একটি মামলা করা হয়, যেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ নেওয়ার এবং সেই অর্থ পাচারের অভিযোগ করা হয়।

দুদক কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, উদ্ধার হওয়া টাকার মধ্যে পার্থের ফ্ল্যাটের ওয়াল কেবিনেটে হলুদ গেঞ্জিতে মোড়ানো ছিল ৫০ লাখ টাকা। আর ৩০ লাখ টাকা পাওয়া যায় একটি স্কুল ব্যাগের ভেতরে।

গ্রেপ্তার হওয়ার সময় পার্থ সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, এই ৮০ লাখ টাকা তার ‘বৈধ আয়’ থেকে অর্জিত। এর মধ্যে ৩০ লাখ টাকা তার শাশুড়ি দিয়েছেন, বাকি ৫০ লাখ টাকা তার ‘সারা জীবনের জমানো’ টাকা।

পার্থ সেদিন দাবি করেন, ফ্ল্যাটের নিচে থাকা তার ব্যবহারের গাড়িটির মালিকও তিনি নন, তার বন্ধুর গাড়ি তিনি ব্যবহার করেন। আর যে ফ্ল্যাটে থাকেন, তাও তার শাশুড়ির।

ওই দিন অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুদক পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফ সেদিন বলেছিলেন, পার্থের সম্পদের বিবরণীতে এসব টাকার ঘোষণা নেই। তাই দুদক মনে করছে- ওই ৮০ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জিত।

“আর আমরা মনে করি, গাড়ি ও ফ্ল্যাট তার নিজেরই, অবৈধ সম্পদকে বৈধতা দিতে অন্যদের নামে ক্রয় দেখিয়েছেন মাত্র।”

এর আগে ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর ভৈরবে একটি ট্রেন থেকে গ্রেপ্তার হন চট্টগ্রামের তখনকার জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস। তার কাছে ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর, ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক ও ফেনসিডিল পাওয়া যায়।

সে সময় তিনি গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব অনিয়ম দুর্নীতির ‘অংশীদার’ হিসেবে চট্টগ্রাম কারাগারের তখনকার ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকের নাম বলেন।

ওই তথ্যের সূত্র ধরে দুদকের অনুসন্ধানী দল পার্থ গোপালকে সেগুনবাগিচার দুদক কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তার ফ্ল্যাট থেকে ওই ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয় বলে দুদক কর্মকর্তারা জানান।

দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময সাবেক কারা মহাপরিদর্শক ইফতেখার উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “তাদের এই দুর্নীতি আমি আইডেন্টিফাই করতে পারিনি। বলতেই হবে এটা আমার ব্যর্থতা। বাকিটুকু প্রমাণ সাপেক্ষ। তদন্ত কী বেরিয়ে আসে সেটা দুদক বলবে।”