বিদেশে গিয়ে মানুষ যেন প্রতারিত না হয়: প্রধানমন্ত্রী

দেশের বাইরে কাজ করতে গিয়ে মানুষ যেন প্রতারিত না হয় সেদিকে নজর রাখার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2019, 09:14 AM
Updated : 25 August 2019, 09:14 AM

তিনি বলেছেন, “মানুষ যেন ধোঁকাবাজিতে না পড়ে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া দরকার। আমাদের নাগরিকরা যে যেই দেশেই যাক, যে কাজেই যাক, আমাদের নজরদারি বাড়ানো দরকার।”

রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিবাসন বিষয়ক জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভার শুরুতে সরকারপ্রধানের এ নির্দেশনা আসে।  

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের আবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী সভায় বলেন, “মানুষ বিদেশে যাবে এটা একটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। কিন্তু কোথাও গিয়ে তারা যেন অকালে হারিয়ে না যায়, সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া… কারণ তারা আমাদেরই নাগরিক। তাদের ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব আমাদের রয়েছে।”

বাংলাদেশের এক কোটির বেশি মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন। তারা দেশে তাদের পরিবারের জন যে বিদেশি মুদ্রা পাঠাচ্ছেন তার পরিমাণ জিডিপির ১২ শতাংশের মত। 

বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে দালালদের মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মত অনিয়মের কথাও প্রধানমন্ত্রী সভায় তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “একটা জিনিস হল, কিছু দালাল শ্রেণির লোক গ্রামেগঞ্জে ঘোরে। সোনার হরিণ ধরার স্বপ্ন দেখিয়ে মানুষের থেকে মোটা অংক নিয়ে তাদের বাইরে পাঠায়। শুধু বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছে তা না। এরপর যা করে বাইরে যাওয়ার পর তাদের কোনো খবর নেয় না। আত্মীয়-স্বজন যখন চাপ দেয় তাদের থেকে আবার টাকা নেয়। এভাবে কিন্তু একটা অনিয়ম প্রচলিত আছে।” 

শেখ হাসিনা বলেন, “অনেক দেশে আমাদের মেয়েরা যায় কাজ করতে। যারা তাদের কাজ করতে পাঠাচ্ছে, কী ধরনের কাজ তারা করতে যাচ্ছে তার জন্য ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা হয় না। ফলে যারা কাজ করতে যাচ্ছে তারা কাজ করতে পারে না। আবার অত্যাচারের শিকার হচ্ছে।”

এসব অনিয়ম বন্ধ করতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও সভায় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এগুলো যাতে বন্ধ হয় তার জন্য ইতোমধ্যে তাদের স্মার্ট কার্ড দেওয়া, টেলিফোনের ব্যবস্থা করা, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য… এবং খবর রাখা। যারা বাইরে যেতে চায় তাদের জন্য সারাদেশে ৫২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। তার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করবে এবং এই রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে তাদের পাঠাব।”

এসব সুযোগ সুবিধা থাকার পরও অনেকে ‘দালালদের খপ্পরে পড়ে বিপদে পড়ে যায়’ মন্তব্য করে সম্প্রতি ভূমধ্য সাগরে নৌকা ডুবিতে অনেক বাংলাদেশির মৃত্যুর ঘটনা মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।

দেশের বাইরে কাজ করতে গিয়ে মানুষ যেন প্রতারণার শিকার না হয়, সেজন্য জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এই জনসচেতনতা সৃষ্টি করে তাদের বোঝানো দরকার, তারা যেন এভাবে না যায়।” 

পাশাপাশি কর্মক্ষম যুব সমাজকে দক্ষ করে গড়ে তোলার তাগিদ দিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশে কর্মক্ষম যুবসমাজ রয়েছে, সেটা আমাদের জন্য বিরাট শক্তি। … তাদের বিভিন্ন কাজের ট্রেনিং দিয়ে দক্ষতা বাড়াতে হবে। 

“এখন আমরা শুধু লেবার পাঠাব না। স্কিলড ম্যানপাওয়ার, অর্থাৎ দক্ষ জনশক্তি কীভাবে আমরা পাঠাতে পারি, রপ্তানি করতে পারি, সেটা… যে যাবে সেও লাভবান হবে; দেশও লাভবান হবে।”

অন্যদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।