বিদেশে সম্পত্তি থাকলে তা বৈধ আয়ে কেনা: মাহী

যুক্তরাষ্ট্রে অর্থপাচারের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী বলেছেন, তার বিদেশে কোনো সম্পত্তি থেকে থাকলে তা বৈধ আয়ে কেনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2019, 06:03 AM
Updated : 25 August 2019, 01:39 PM

রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বেরিয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন এই সংসদ সদস্য।

সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোটসঙ্গী দলের নেতা মাহী ও তার স্ত্রী আশফাহ হক লোপাকে তলব করেছিল দুদক।

মাহী উপস্থিত হলেও তার স্ত্রী আসেননি। লোপা অসুস্থ জানিয়ে মাহী সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমি আমার স্ত্রীকে রিপ্রেজেন্ট করি।”

সস্ত্রীক মাহী বি চৌধুরী

‘যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচারের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহিভূর্ত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ’ তদন্তে মাহীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন আহাম্মদ।

জিজ্ঞাসাদ শেষে বেরিয়ে আসার পর মাহীকে নানা প্রশ্নে ছেঁকে ধরেন অপেক্ষমান সাংবাদিকরা।

তিনি বলেন, “এখানে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সুযোগ নেই, মানি লন্ডারিংয়েরও সুযোগ নেই। বাংলাদেশের বাইরে যদি কোনো আয় থেকে থাকে, ব্যয় থাকে, তা বাংলাদেশের বাইরের বৈধ আয় থেকেই হয়েছে।”

জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে মাহী বলেন, “একটি অভিযোগ এসেছে আমার নামে, সেই অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত করছে দুদক। সেই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করার জন্য আমার বক্তব্য নেওয়া প্রয়োজন ছিল। সেই জন্য দুদক আমাকে ডেকেছে, আমি আমার বক্তব্য দিয়েছি।

“আমি মনে করি দুদকে যেহেতু অভিযোগ এসেছে, দুদক প্রকৃত অথরিটি, সত্য উদঘাটনের জন্য সময় দরকার। আমার কাছ থেকে দুদক যেসব তথ্য চেয়েছে, সেগুলো আমি দেব। দুদক তার মতো কাজ করবে। এর পাশাপাশি আমার কিছু কাজ করতে হবে, যা পরবর্তীতে ওই সংবাদ সম্মেলনে খোলাসা করব। অভিযোগে সত্যতা কতটুকু, এর পেছনে কী ষড়যন্ত্র রয়েছে, তা বলব।”

আগামী ২৭ বা ২৮ অগাস্ট সেই সংবাদ সম্মলেন করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “পেছনে কী কারণ রয়েছে, যে অভিযোগুলো এসেছে, তার ভিত্তি কতটুকু, সেগুলোর ব্যাখ্যা অবশ্যই আমরা দেব।”

নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবেন কি না- এ প্রশ্নে মাহী বলেন, "নির্দোষ প্রমাণ করারই কিছু নেই, আমি নির্দোষ, এটা আপনারা দেখতে পাবেন।”

কোনো হয়রানির শিকার হচ্ছেন কি না- এ প্রশ্নে এই সংসদ সদস্য বলেন, “না না না, হয়রানির কিছু নেই।”

ফাইল ছবি

তবে দুদক তলবের চিঠি দেওয়ার পর থেকে অপপ্রচারের শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।

“গত ২৫টি দিন ধরে আমি চুপচাপ আছি, কিন্তু ২৫টি দিন ধরে ট্রায়াল চলছে। যা ইচ্ছে এক তরফাভাবে বলা হচ্ছে। এও দেখেছি যে ঘুরে ঘুরে হকার-ব্রোকার বলে বেড়াচ্ছে। গরম খবর গরম খবর মাহী চৌধুরীর ছয় বাড়ি- এগুলো দেখছি। আমাদের পলিট্রিক্যাল ট্রায়াল বেশি হয়।”

এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে মাহী বলেন, “অভিযোগ আসার সাথে সাথেই যদি মিডিয়া ট্রায়াল হয়ে যায়, যারা শুধু ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বিশ্বাস করেন, তারা এগুলো প্রচার করেন অন্যভাবে। এ অভিযোগগুলো নির্বাচনের আগে থেকে আসা শুরু হয়েছে। আমি দেখেছি, এগুলো মোটামুটি একই অভিযোগ।”

এই প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে সঠিকভাবে কাজ করতে দেওয়া না হলে বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে না।

তিনি বলেন, "অনেক সময় আমাদেরকে ধৈর্য ধারণ করতে হয় রাজনীতির কারণে। ধৈর্য ধারণ করলে সত্য উদঘাটিত হবে, তা আমি বিশ্বাস করি।”

গত ৪ অগাস্ট দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মাহীর গুলশানের বারিধারার (রোড নং ১২, বাড়ি ১৯) ঠিকানায় পৃথক দুটি নোটিস পাঠিয়ে এই দম্পতিকে ৭ অগাস্ট কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল।

কিন্তু ৭ অগাস্ট তারা অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দিতে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহের জন্য আরও সময়ের দাবি করে কমিশনে আবেদন করলে ২৫ অগাস্ট তাদেরকে নতুন করে তলব করা হয়।

দুদক গত জুন থেকে এই অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে বলে কমিশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।