রোহিঙ্গাদের ভুল বোঝাচ্ছে কিছু এনজিও: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

কিছু এনজিওর তৎপরতা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সাজিদুল হক সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2019, 01:19 PM
Updated : 22 August 2019, 01:48 PM

বৃহস্পতিবার এক বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে এই অভিযোগ শুনে ওই এনজিওগুলোকে চিহ্নিত করার সুপারিশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।

এক বছর আগে প্রথম দফার পর বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার দিনই সংসদ ভবনে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় ওঠে।

নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একাংশকে এদিন ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা হলেও তারা যেতে রাজি হয়নি।

রোহিঙ্গাদের না যাওয়ার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের প্রতি তাদের অনাস্থার বিষয়টিই প্রকাশ পেয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক আখ্যায়িত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও বলেন, রোহিঙ্গাদের আস্থার যে ঘাটতি আছে, তা মিয়ানমারকেই দূর করতে হবে।

মিয়ানমারে ফিরব না- প্ল্যাকার্ড হাতে রোহিঙ্গারা

সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনার পর কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, কিছু কিছু এনজিও রোহিঙ্গাদের বোঝাচ্ছে, তারা যেন নিজ দেশে না যায়।

“এনজিওরা বোঝাচ্ছে, নাগরিকত্বসহ কিছু শর্ত পূরণ না হলে যেন তারা না ফিরে যায়।”

“কমিটি এসব এনজিওদের কাজ মনিটরিং করে তাদের চিহ্নিত করতে বলেছে,” বলেন তিনি।

বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা যে সব শরণার্থী শিবিরে রয়েছে, সেখানে বিভিন্ন এনজিও কাজ করছে। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরও কাজ করছে সেখানে।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা দেশি-বিদেশি এনজিওর কর্মকাণ্ড নিয়ে কিছু দিন আগে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির এক বৈঠকেও প্রশ্ন তোলা হয়েছিল।

কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, কিছু এনজিও সেখানে ‘ইল মোটিভ’ নিয়ে কাজ করছে বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে।

বাংলাদেশের আহ্বানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে মিয়ানমার ৭ লাখ শরণার্থীকে ফেরত নিতে রাজি হলেও রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিকত্ব এবং রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস নিশ্চিতসহ কয়েকটি শর্ত দিয়েছে।

তারা বলছে, মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর আগে তাদের নাগরিকত্ব, জমি-জমা ও ভিটেমাটির দখল, নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এদিকে আর বাংলাদেশও বলছে, জোর করে কোনো শরণার্থীকে ফেরত পাঠানো হবে না।

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করা এনজিওদের কার্যক্রম তদারকির সুপারিশ করা হয়।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির

রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে ফেরার বিষয়ে উৎসাহী হয় সেজন্য সরেজমিন পরিস্থিতি দেখতে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দলকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি।

ফারুক খান বলেন, “মিয়ানমারেও জাতিসংঘের অফিস আছে। তারাও সেখানে কাজ করুক।

“রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ কোনো বার্গেইনিং এজেন্ট না। মানবিক কারণে তাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি। তারা যাতে দেশে ফিরতে ভরসা পায়, সেজন্য তাদের প্রতিনিধি দলকে মিয়ানমার ঘুরিয়ে আনতে বলেছি।”

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ‘সেইফ জোন’ সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য সংসদীয় কমিটির সদস্যদের সংশ্লিষ্ট দেশ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম সফরের ব্যবস্থা করতেও সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এ মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, আব্দুল মজিদ খান, কাজী নাবিল আহমেদ  ও নিজাম উদ্দিন জলিল (জন) অংশ নেন।

পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব খোরশেদ আলমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।