ডেঙ্গু: আট মাসেই ১৯ বছরের চেয়ে বেশি রোগী

বর্ষা মৌসুম শেষ হতে আরও এক মাস বাকি; কিন্তু এরই মধ্যে চলতি বছরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের মোট সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছড়িয়ে গেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 August 2019, 03:26 AM
Updated : 21 August 2019, 03:32 AM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশনস অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের শুরু থেকে মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত সারা দেশে ৫৬ হাজার ৩৬৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

আর ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট ৫০ হাজার ১৪৮ জনের ডেঙ্গুর চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য নথিভুক্ত হয়েছে সরকারের খাতায়। 

অর্থাৎ, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা গত দেড় যুগে মোট আক্রান্তের সংখ্যাকেও ছাপিয়ে গেছে।

 

ডেঙ্গু জ্বরে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যুর খবর সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের ‘ডেথ রিভিউ’প্রক্রিয়া শেষ করে নিশ্চিত করেছে।

তবে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও জেলার চিকিৎসকদের কাছ থেকে অন্তত ১৭৪ জনের মৃত্যুর তথ্য এসেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে।

এই হিসাব ধরলে চলতি বছর মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ।

২০০০ সালের পর ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি ছিল ২০০৩ সালে। সে বছর সরকারি হিসাবে ৪৮৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন; মারা গিয়েছিলেন ১০ জন। সে হিসাবে ২০০৩ সালে মৃত্যুহার ছিল, দুই দশমিক ০৬ শতাংশ।

সরকারি হিসাবে এই সময়ে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় ২০০০ সালে। সেবছরই বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ধরা পড়ে।

২০০০ সালে সারা দেশে পাঁচ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন; মৃত্যু হয় ৯৩ জনের। সে বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার ছিল ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

২০০২ সালে মৃত্যুহার ছিল শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ। ওই বছর ছয় হাজার ২৩২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন, মারা গিয়েছিলেন ৫৮ জন।

২০০১ সালে সরকারি হিসাবে দুই হাজার ৪৩০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর মারা গিয়েছিলেন ৪৪ জন। সে হিসাবে ২০০১ সালে মৃত্যুহার ছিল ১ দশমিক ৮১ শতাংশ।

 

চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করার কারণ জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার বর্ষা আগে চলে এসেছিল, মুসলধারে বৃষ্টিও হয়নি, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। সেজন্য মশার বংশবৃদ্ধি হয়েছে বেশি। আর মশা সেভাবে নিমূর্লও হয়নি।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডীন ও ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, ডেঙ্গু থেকে রক্ষার একটাই উপায়; তা হল মশার কামড় থেকে বাঁচতে হবে।

২০০৭ সাল ২০১৪ পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল তুলনামূলকভাবে কম। ওই আট বছরে কখনোই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়ায়নি।

এর মধ্যে ২০০৭ সালে ৪৬৬ জন, ২০০৯ সালে ৪৭৪ জন, ২০১০ সালে ৪০৯ জন, ২০১২ সালে ৬৭১ জন এবং ২০১৪ সালে ৩৭৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। সরকারি হিসাবে ২০১২ সালে ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু হয়।

২০১৫ সাল থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ আবার বাড়তে শুরু করে। ২০১৭ কমে গিয়েও ২০১৮ সালে আবার বেড়ে যায়।

২০১৫ সালে ৬ জন, ২০১৬ সালে ১৪ জন, ২০১৭ সালে ৮ জন এবং ২০১৮ সালে ২৬ জন সরকারি হিসাবে মারা যান মশাবাহিত এ রোগে।