এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত পাঁচ শতাধিক পুলিশ: চিকিৎসক

ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যে গত সাড়ে তিন মাসে পাঁচশ’র বেশি পুলিশ সদস্য মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন।

কামাল তালুকদার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2019, 04:21 PM
Updated : 20 August 2019, 04:27 PM

আর এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুজন পুলিশ সদস্য এবং দুজন পুলিশ সদস্যের স্ত্রীর মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

ডেঙ্গু আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের অধিকাংশই মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসক মনোয়ার হোসেন।

তবে খোঁজ নিয়ে একজন অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপার পদমর্যাদার তিনজন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা এবং বেশ কয়েকজন পরিদর্শকের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে জানা গেছে।

পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসক মনোয়ার মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ বছরের মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশ সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে মোট ৭৮৫ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫২৫ জন ছিল পুলিশ সদস্য।

মঙ্গলবার ৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী এই হাসপাতলে ভর্তি রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে ৫২ জন পুলিশ সদস্য এবং ১৩ জন তাদের পরিবারের সদস্য।

এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের সবার অবস্থা ভালো বলে জানান এই চিকৎসক। এখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত কারও মৃত্যু হয়নি বলেও জানান তিনি।

মনোয়ার হোসেন বলেন, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে ধারাবাহিকভাবে কমছে।

২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে কোনো আইসিইউ নেই। পাঁচ শয্যার আইসিইউ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, বর্তমানে ঢাকা মহানগরে পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে ৭০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে ৬৫ জন রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে, তিনজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, একজন শমরিতা ও একজন প্রশান্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ৩১ জুলাই পুলিশের এসআই কোহিনুর বেগম নীলা (৩৩) রাজধানীর মোহাম্মদপুর সিটি হাসপাতালে মারা যান। গত ১২ অগাস্ট অ্যাপোলো হাসপাতালে মারা যান জামাল হোসেন নামে একজন কনস্টেবল।

এছাড়া ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ৪ অগাস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি শাহাব উদ্দীন কোরেশীর সহধর্মিনী সৈয়দা আক্তার (৫৬) স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান এবং

৩০ জুলাই পুলিশ কনস্টেবল মো. দুলাল হোসেনের স্ত্রী রুপা আক্তার (২৭) শ্যামলী ট্রমা সেন্টার অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠা একজন এসআই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টহল ডিউটি দিচ্ছিলাম। হঠাৎ করে শরীর খারাপ লাগছিল এবং জ্বর আসে। বাসার আশপাশ পরিষ্কার, ঘর পরিষ্কার রেখেছি তারপরও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলাম, বুঝতে পারলাম না কীভাবে হল।”

একজন পরিদর্শকের ১০ বছরের শিশু সন্তান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।

ওই পরিদর্শক বলেন, “আমার পরিবারের, আত্মীয়-স্বজনের এমনকি আমার ভবনের কেউ আক্রান্ত হয়নি। ধারণা করছি, আজিমপুরে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে যাওয়া-আসার পথে কোথাও এইডিস মশা কামড় দিয়েছে আমার মেয়েকে।”

পুলিশ সদর দপ্তরে দায়িত্বরত একজন পরিদর্শক বলেন, তার বাসা সিদ্ধেশ্বরী এলাকায়। তার চার বছরের শিশু সন্তান এবং ছয় বছরের ভাতিজা এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল।

“বাসা পরিষ্কার, আশপাশ পরিষ্কার তারপরও বাচ্চা ও ভাতিজা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হল। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে সেখানে পানি জমে থাকে দিনের পর দিন, সেখান থেকে আমার বাচ্চা আক্রান্ত হয়েছে।”

ডেঙ্গু মোকাবেলায় পদক্ষেপ জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন) তাপতুন নাসরিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়ে আমরা আগের থেকে বেশি সচেতন। এখন এটা আরও জোরালোভাবে শুরু হয়েছে এবং চলছে।

“নিজের রুম, বাসার আশপাশ পরিষ্কার রাখি, কোনো কিছু রাস্তাঘাটে এদিক-সেদিক যাতে নিক্ষেপ না করি- এ ধরনের বার্তা পুলিশকে দেওয়া হচ্ছে এবং জনগণকেও দেওয়া হচ্ছে।”

জ্বর হলে যাতে ডেঙ্গু পরীক্ষা করান সেই নির্দেশ পুলিশের সবাইকে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু এনএস১ পরীক্ষার প্রতিবেদনের জন্য প্যাথলজির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন রোগীর স্বজনরা।

রিপোর্ট পাওয়ার পর হেসে একজন কনস্টেবল বলেন, তার শিশু বাচ্চাটির পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে।

পরে সঙ্গে থাকা স্ত্রী ও বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই দিন ধরে বাচ্চার জ্বর, খুব টেনশনে ছিলাম। গতকাল এসে হাসপাতলে রক্ত দিয়েছি।”

হাসপাতালের আনাচ-কানাচ ঘুরে মোটামুটি পরিষ্কার দেখা গেলেও একটি ড্রেনে খানিক পানি জমে থাকতে দেখা যায়। হাসপাতালে প্রবেশের ফটকের উত্তর পাশেও কিছু ময়লা- আবর্জনা এবং একটি পাইপ দিয়ে পানি বের হতে দেখা যায়।

মনোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা সব সময় হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করি। পরিচ্ছন্নতকর্মীরা সব সময় কাজ করছে।”