আসামের নাগরিকপঞ্জি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়: জয়শঙ্কর

আসামের নাগরিকপঞ্জি নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগের মধ্যেই বিষয়টিকে ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2019, 09:16 AM
Updated : 20 August 2019, 02:16 PM

তিনি বলেছেন, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারত সরকারের যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তা এখনও অটুট আছে।

তবে জম্মু ও কশ্মীরের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করার পর থেকে চলমান উত্তেজনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিন মাস আগে নরেন্দ্র মোদীর নতুন সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথমবার বাংলাদেশ সফরে আসা জয়শঙ্কর মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তারা। 

মোমেন বলেন, তাদের মধ্যে ‘খুবই ভালো’ আলোচনা হয়েছে। বেশ কিছু বিষয়ে তারা ‘কম-বেশি ঐকমত্যে’ পৌঁছেছেন। তবে কোন কোন বিষয়ে এই ঐকমত্য হয়েছে- তা তিনি বিশদ।  

বাংলাদেশ ও ভারতের কর্মকর্তাদের ভাষায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের সম্পর্ক রয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো অবস্থায়। এই বন্ধুত্বকে আরও এগিয়ে নেওয়ার কথা নিয়মিতই বলা হচ্ছে দুই সরকারের তরফ থেকে।

গত এক দশকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে শতাধিক চুক্তি হয়েছে, যার মধ্যে ৮৬টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে কেবল গত তিন বছরের মধ্যে। সমুদ্রসীমা ও ছিটমহল নিয়ে বহুদিনের ঝুলে থাকা সমস্যাও এই সময়ে মিটিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার।

কিন্তু তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুত চুক্তিটি এখনও আটকে আছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিরোধিতার কারণে। দুই দেশের বিভিন্ন বৈঠকে নিয়মিতভাবে এ বিষয়টি আসছে, কিন্তু তিস্তার জট খুলছে না।

তাছাড়া সীমান্ত লাগোয়া ভারতীয় রাজ্য আসামের নাগরিকপঞ্জি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স-এনআরসি) নিয়েও বাংলাদেশে উদ্বেগ রয়েছে।

যেভাবে ওই তালিকা করা হচ্ছে তাতে আসামের ৪০ লাখের বেশি বাসিন্দা নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হতে পারে এবং তাদের অবৈধ ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে ভারত থেকে বের করে দেওয়া হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে দেশটির গণমাধ্যমে।

কিন্তু সাংবাদিকদের ব্রিফ করতে এসে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো আলোচনায় যাননি জয়শঙ্কর।

তিনি সরাসরিই বলেন, “এটা একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।”

তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জন্য পনি খুবই ‘গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়’।

“অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানিবণ্টনের বিষয়ে একটি ফর্মুলা আমরা বের করতে চাইছি যাতে দুই দেশই লাভবান হতে পারে।”

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ওই চুক্তিতে রাজি থাকালেও এর আগে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিরোধিতায় তা স্বাক্ষরিত না হওয়ার ঘটনার দিকে ইংগিত করে জয়শঙ্কর বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের মনোভাব আপনারা জানেন। এ বিষয়ে আমাদের একটা প্রতিশ্রুতি আছে, আর সেটা এখনও বদলায়নি।”

এক সময় ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব সামলে আসা জয়শঙ্কর বলেন, আসছে অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর নিয়ে আলোচনা করাও তার ঢাকা সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য।  

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়, দুই দেশের সম্পর্ক এখন কৌশলগত অংশীদারিত্বের চেয়েও বেশি কিছু। আর আগে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে এবং এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারাটাও তার জন্য বিশেষ কিছু।

“আমরা বিশ্বাস করি, নিরাপত্তার প্রশ্নে, বিশেষ করে অপরাধ, সন্ত্রাসবাদ এবং উগ্রবাদের বিরুদ্ধে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে পারলে দুই দেশের মানুষই উপকৃত হবে।” 

জয়শঙ্কর বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সব দিক দিয়েই দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বেড়েছে। ভারত এই অংশীদারিত্বকে আরও এগিযে নিতে চায়। 

তার ভাষায়, জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতার মধ্য দিয়েও দুই দেশের লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আর দ্বিপক্ষী বাণিজ্যটাও এমনভাবে বাড়াতে হবে, যাতে তা বাংলাদেশের জন্য ‘স্বস্তিদায়ক’ হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনে ভারতের অংশীদার হওয়ার আগ্রহের কথা আবারও তুলে ধরে জয়শঙ্কর।

তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের যাতে দ্রুত নিরাপদে মিয়ানমারে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো যায়, এবং প্রত্যাবাসন যেন টেকসই হয়, সে বিষয়ে দুই পক্ষই বৈঠকে একমত হয়েছে।

“বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক, সব প্রতিবেশী দেশের জন্যই তা উদাহরণ হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চান, এই অংশীদারিত্ব দক্ষিণ এশিয়ায় একটি রোল মডেল হয়ে থাকুক। 

সোমবার রাতে ঢাকায় আসার পর মঙ্গলবার সকালে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।

সফর শেষে বুধবার সকালে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে জয়শঙ্করের।