মিন্নির ‘স্বীকারোক্তি’ নিয়ে এসপির ব্রিফিং কখন হয়েছিল: হাই কোর্ট

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির ‘স্বীকারোক্তির’ বিষয়ে পুলিশ সুপার কখন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছিলেন- তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2019, 11:18 AM
Updated : 19 August 2019, 02:05 PM

পুলিশ সুপারের ওই ব্রিফিং মিন্নি জবানবন্দি দেওয়ার আগে না পরে হয়েছিল- তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

সোমবার মিন্নির জামিন আবেদনের শুনানির এক পর্যায়ে আদালত তার আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে মঙ্গলবার বেলা ২টার মধ্যে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যসহ সম্পূরক আবেদন দাখিল করতে বলে।

পুলিশ লাইনসে নিয়ে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ, তাকে গ্রেপ্তার দেখানো, পরদিন তাকে আদালতে হাজির করা, রিমান্ড শুনানি, রিমান্ডে নেওয়ার পর তাকে কোথায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়- সেসব বিষয়ও বিস্তারিতভাবে জানাতে বলা হয় ওই সম্পূরক আবেদনে।

পাশাপাশি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসাইন বাপ্পীকেও এ বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে আসতে বলেছে আদালত।

আদালতে মিন্নির পক্ষে আইনজীবী জেড আই খান পান্না ছাড়াও শুনানিতে ছিলেন এম মঈনুল ইসলাম ও মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম।

এর আগে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চে জামিন আবেদন করেছিলেন মিন্নির আইনজীবীরা। কিন্তু সেখানে জামিন পাওয়ার আশা না দেখে আবেদনটি ফিরিয়ে নিয়ে রোববার তা বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে দাখিল করা হয়।

গত ২৬ জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়।

পরদিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন; তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে।

পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলেকে হত্যায় পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়।

গত ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হলে সেখানে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে পুলিশ জানায়।

তার আগের দিনই পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “মিন্নি হত্যাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং হত্যা পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নির যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।”

বরগুনা সরকারি কলেজের স্নাতকের এই ছাত্রী পরে জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে।

সোমবার শুনানিতে মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, মিন্নির রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে সেদিন তার পক্ষে কোনো আইনজীবী পাওয়া যায়নি। আর পুলিশ তাকে রিমান্ডে পেয়ে পুলিশ লাইনসে নিয়ে গিয়েছিল, যা নিয়মের লঙ্ঘন।

“মিন্নি ১৯ বছরের একটি মেয়ে, সে স্বামীকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছে, সেটা ভিডিওতে এসেছে। কিন্তু পুলিশ সেই ভিডিও ১১ ভাগে ভাগ করে পুলিশ দেখিয়েছে, সেই মূল আসামি। অথচ সেই একমাত্র চাক্ষুষ সাক্ষী। এখন বলছে- মিন্নি এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত।

“বলা হচ্ছে, নয়ন বন্ড নামের যে ছেলেটি তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে, তার সাথে মিন্নির সম্পর্ক ছিল। ১৯ বছরের একটা মেয়েকে রিমান্ড আদেশের আগে ও পরে পুলিশ লাইনসে নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এটা সংবিধানের ৩৩ (১) অনুচ্ছেদ ও রিমান্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের যে নির্দেশনা, তার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এ সময় বলেন, “দেখলাম পুলিশ সুপার সাহেব সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন যে, মিন্নি দোষ স্বীকার করেছে। সেটা মিন্নির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দির আগে না পরে?”

জবাবে আইনজীবী সুনির্দিষ্ট তারিখ বলতে না পারায় আদালত এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তারিখ জানিয়ে আদালতে সম্পূরক আবেদন দিতে বলেন। এ নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টও যুক্ত করতে বলা হয় তাকে।    

মিন্নির বাবা অভিযোগ করে আসছেন, ‘নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে’ মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হাত আছে বলেও তার দাবি।

বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত এবং জেলা ও দয়েরা জজ আদালতে মিন্নির জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর গত ৫ অগাস্ট হাই কোর্টে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।

পরে গত ৮ অগাস্ট বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের অবকাশকালীন হাই কোর্ট বেঞ্চে আংশিক শুনানির পর জামিন পাওয়ার আশা না দেখে মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না আবেদন ফিরিয়ে নেন।