ঈদের ছুটিতে নিজের এলাকা পটুয়াখালীতে হামলার শিকার হওয়ার পর রাজধানীতে ফিরে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই প্রশ্ন তোলেন।
নুর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, “কিছু দিন আগেও বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আপনি নিজেই বলেছেন, সরকারের সমালোচনা করতে বাধা নেই, দেশে ভিন্ন মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে।
“তাই আপনার কাছে আমাদের আবেদন, ভিন্ন মতের মানুষের উপর দমন-পীড়ন বন্ধ করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে আপনার দলের নেতা-কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দলীয় প্রভাবমুক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর করুন।"
‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ'র নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের এই নেতা বলেন, “যারা হামলার সাথে জড়িত, তাদেরকে অতিদ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়ে দেশে আইনের শাসন রয়েছে সেটা প্রমাণ করুন।”
তিন দশক পর এই বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের প্রার্থীকে হারিয়ে ভিপি নির্বাচিত হন ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ'র যুগ্ম আহ্বায়ক নুর।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নেমে গঠিত এই পরিষদের নেতা হিসেবে হামলার শিকার হয়েছিলেন নূর।
ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন এক সময়ে ছাত্রলীগে যুক্ত থাকা নুর। তখন তিনি বলেছিলেন, শেখ হাসিনার মাঝে নিজের হারানো মাকে খুঁজে পান তিনি।
তবে সরকারের সমালোচনায় মুখর থাকা নুর ডাকসু ভিপি হওয়ার পর ঢাকার বাইরে গিয়েও হামলার মুখে পড়েন; সর্বশেষ হামলা হয় গত ১৪ অগাস্ট পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার উলানিয়া বন্দরে।
সংবাদ সম্মেলনে নুর বলেন, কোনো অপরাধ না করেও বারবার ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়তে হচ্ছে তাকে।
“আমি কোনো অন্যায়-অপরাধ করিনি। শুধু অন্যায়-অনিয়মের প্রতিবাদ করার কারণেই আমি ও ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীরা বার বার ক্ষমতাসীন দলের রোষানলের স্বীকার হয়েছি। ক্ষমতাসীন দলের নেতা ছাড়াও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের কাছ থেকেও প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন হচ্ছি।”
১৪ অগাস্টের হামলার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “পটুয়াখালী-৩ এর সাংসদ এস এম শাহজাদা সাজুর নির্দেশে গলাচিপা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহর নেতৃত্বে তার ভাই নুরে আলম, লিটু পেদা, আব্বাস পেদা, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনুল ইসলাম রণো, উলানিয়া যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিল, যুবলীগ নেতা ইদ্রিস, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ফরিদ আহসান কচি, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ আসিফ, ছাত্রলীগ নেতা জাহিদ, তূর্য্যসহ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের প্রায় শতাধিক নেতা-কর্মী আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রড, স্টিলের পাইপ ও চাপাতি নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়।”
হামলায় প্রায় ২০-২৫ জন আহত হন দাবি করে নুর বলেন, এছাড়া ১০টি মোটর সাইকেল ভাংচুর, দুটি ডিসএলআর ও ৮৯ হাজার টাকা ছিনতাই করে।
তিনি বলেন, “সন্ত্রাসীরা শুধু হামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি, আমাকে চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত করেছে। ডাক্তার সিটি স্ক্যান ও ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করার জন্য বরিশাল মেডিকেলে রেফার করলেও সন্ত্রাসীরা এবং পুলিশ আমাকে জোর করে বাসায় পাঠিয়ে দেয় এবং এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য আমাকে ও আমার পরিবারকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।”
হামলা ঠেকাতে পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন ডাকসু ভিপি নুর।
“হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় গলাচিপা পুলিশের সহযোগিতা চাইলেও ওসি কোনো ধরনের সহযোগিতা করেননি। এমনকি পুলিশের উপস্থিতিতেও সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে হামলা চালালেও ওসি হামলার কথা অস্বীকার করে।”
হামলার পর গলাচিপা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ আসিফ সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছিলেন, “আমরা নুরের আহত হওয়ার খবর শুনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পুলিশকে সহযোগিতা করে তাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।”
হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের কারও জড়িত থাকার অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
গলাচিপা থানার ওসি আখতার মোর্শেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, নুর সেদিন দুপুরে তার বোনের বাড়ি দশমিনায় যাচ্ছিলেন। এসময় বিপরীত দিক গলাচিপা থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্যের বাড়িতে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যাচ্ছিলেন। তাদের দেখে নুরের সঙ্গীরা ‘ভয়ে পালানোর চেষ্টা করে’। তখন হয়ত পড়ে গিয়ে নুর আহত হন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারের পর নুরকে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে ওসি জানান।