রোহিঙ্গা সঙ্কটে বাংলাদেশের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল দুর্বল: অধ্যাপক মিজান

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রাথমিক অবস্থায় বাংলাদেশ যে সাড়া দিয়েছিল তা ছিল ‘দুর্বল, এলোমেলো’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2019, 03:39 PM
Updated : 18 August 2019, 03:39 PM

তবে তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেছেন, এ ধরনের তথ্য ‘সঠিক নয়’।

তারা দুজনেই রোববার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইএসএস) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তব্য দিচ্ছিলেন।

‘রোহিঙ্গা ক্রাইসিস অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক এই সেমিনারে সঞ্চালনায় ছিলেন বিআইএসএস পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ।

নিপীড়ত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে দশকে পর দশক ধরে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর পরেই এসেছে সাত লাখের বেশি।   

জাতিসংঘ সেনাবাহিনীর ওই অভিযানকে বর্ণনা করে আসছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে, যদিও মিয়ানমার তা স্বীকার করে না। 

মিজানুর রহমান বলেন, “রোহিঙ্গা সঙ্কটকে কেবল বাংলাদেশ, মিয়ানমার আর রোহিঙ্গাদের সমস্যা হিসেবে না দেখে আমাদের উচিৎ হবে বিষয়টাকে আন্তর্জাতিকীকরণ করা।“

এ সমস্যাকে ‘সত্যিকার অর্থেই আন্তর্জাতিক একটি সঙ্কট’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, “ব্যক্তি হিসেবে আমার মনে হয়েছে, এ সঙ্কটের প্রাথমিক অবস্থায় বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া ছিল খানিকটা দুর্বল, এলোমেলো।”

মিজানুর রহমান বলেন, প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া দেখে তার মনে হয়েছিল, সরকার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশ্বাস করে, মিয়ানমার একটি শান্তিপ্রিয় প্রতিবেশী দেশ এবং দুই ‘বড় ভাই’ ভারত ও চীনের সহযোগিতা নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে শিগগিরই এ সমস্যা মিটিয়ে ফেলা যাবে। 

“কিন্তু হঠাৎ আমরা আবিস্কার করলাম, ভারত বা চীন, এমনকি রাশিয়াও এ বিষয়ে আমাদের পাশে নেই। পররাষ্ট্র দপ্তর, সরকার আর বাংলাদেশের মানুষের জন্য এটা ছিল খুবই হতাশাজনক।”

তবে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক দাবি করেন, অধ্যাপক মিজানের এই বক্তব্যে ‘ভুল তথ্য’ অথবা ‘সঠিক তথ্যের অভাব’ রয়েছে।

তিনি বলেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টা কীভাবে সামলেছে তা এখানে দেখতে হবে। কোনো পর্যায়ে আমরা বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে গেছি- এরকমটা ঘটেছে বলে আমরা মনে হয় না। আমরা ওয়াকিবহাল ছিলাম। আমাদের যা প্রতিক্রিয়া দেখানোর তা আমরা দেখিয়েছি। এর কিছুটা প্রকাশ্যে দেখা গেছে, আবার কিছু দেখা যায়নি। তার মানে এই না যে আমাদের যা জানার কথা তা আমরা জানতাম না। “ 

সচিব বলেন, যে কোনো সমস্যার সমাধান খুঁজতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা একটি বহু ব্যবহৃত পদ্ধতি, যা বাংলাদেশ অনুসরণ করেছে। তবে বহুপক্ষীয় আলোচনা বা উদ্যোগের সম্ভাবনা বাংলাদেশ কখনোই বাতিল করে দেয়নি।

“আমরা একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় চেষ্টা চালিয়ে গেছি। কখনোই আমরা কেবল দ্বিপক্ষীয় চেষ্টার মধ্যে আটকে থাকিনি। আপনারা কখনও আমাদের দ্বিপক্ষীয় চেষ্টায় জোর দিতে দেখেছেন, আবার কখনও বহুপক্ষীয় চেষ্টায়।”

শহীদুল হক বলেন, আঞ্চলিক বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করার পাশাপাশি যত ধরনের সুযোগ ছিল, তার সবই ব্যবহার করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

“তাতে যে সাড়া আমরা পেয়েছি, তাতে কখনও হতাশ হতে হয়েছে বলে আমি মনে করি না, কারণ সব দেশেরই নিজস্ব স্বার্থের একটি জায়গা থাকে। সে বিষয়েও আমরা সব সময় সচেতন ছিলাম।”

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশ সব সময় রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর ওপর জোর দিয়ে আসছে।

“সেটাই হতে পারে শন্তিপূর্ণ সমাধান। এর বাইরে আর কোনো বিকল্পের কথা কখনো আমরা বলিনি। রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে হবে। সেই চেষ্টাই আমরা করে যাব।”

আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই যাতে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়, সেজন্য রোহিঙ্গাদের উৎসাহ দেওয়া হবে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তাদের নিজেদের স্বার্থেই ফিরে যাওয়াটা জরুরি, কেননা তা না হলে তারা যে কেবল ভূমি হারাবে তাই নয়, মিয়ানমারের সব অধিকার থেকেই তারা বঞ্চিত হবে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো প্রত্যাবাসন শুরুর সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে ২২ অগাস্টের কথা বললেও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিন তারিখ বলতে রাজি হননি শহীদুল হক। 

তিনি বলেন, “এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যে কোনো সময় এটা হতে পারে।”