শহিদুলের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত স্থগিতের আদেশ আপিলে বহাল

আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে করা মামলার তদন্ত কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করে জারি করা রুল ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2019, 09:08 AM
Updated : 18 August 2019, 09:08 AM

হাই কোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন নিষ্পত্তি করে রোববার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

এর ফলে মামলার তদন্তে হাই কোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল থাকছে বলে জানিয়েছেন শহিদুল আলমের আইনজীবী জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।

শুনানির পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে রুলটি নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। মামলার তদন্তে হাই কোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ বহালই থাকছে।’

শুনানিতে তার সঙ্গে ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে আবেদনের শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘যে আইনের মামলায় শহিদুল আলমকে আসামি করে এফআইআর দেওয়া হয়েছিল, সে আইনের কয়েকটি ধারা পরবর্তীতে বাতিল করা হয়। সুতরাং তার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত হাই কোর্ট স্থগিত করে রুল দিয়েছিল।

“গত ৪ এপ্রিল এই আদেশের বিরুদ্ধে আমরা লিভ পিটিশন দায়ের করেছিলাম। আজ শুনানির তারিখ ছিল। আপিল বিভাগ খুব দ্রুত হাই কোর্টের জারি করা রুল নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়ে আমাদের আবেদনটি নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন।’

মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে শহিদুল আলমের করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৪ মার্চ বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযু্ক্তি আইন, ২০০৬ (সংশোধিত, ২০১৩) এর ৫৭ ধারায় করা মামলাটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ ও সংবিধানের ৩১ এবং ৩৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় কেন তা আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। 

স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, রমনার ওসি, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (উত্তর) পরিদর্শক মো. মেহেদী হাসান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (উত্তর) পরিদর্শক আরমান আলী ও ঢাকার মূখ্য মহানগর হাকিমকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত গতবছরের ৩ ও ৪ অগাস্ট জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার ফেইসবুক লাইভে এসেছিলেন শহিদুল। ওই আন্দোলনের বিষয়ে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরকারের সমালোচনাও করেন।

এরপর ৫ অগাস্ট শহিদুল আলমকে তার বাসা থেকে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন ‘উসকানিমূলক মিথ্যা’ প্রচারের অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তার নামে মামলা হয়।

প্রায় সাড়ে তিন মাস কারাগারে থাকার পর গত বছরের ২০ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পান শহিদুল। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ৩ মার্চ তিনি হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।

ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত প্রথমে শহিদুল আলমের মামলার নথি তলব করে। পরে সেই নথি দেখার পর গত ১৪ মার্চ হাই কোর্ট মামলার তদন্ত স্থগিতের আদেশ দেয়।