জঙ্গি নির্মূলে তিন চ্যালেঞ্জ দেখছেন পুলিশ কর্মকর্তা

২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলার দেড় দশক পরে এসে বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূলে তিনটি চ্যালেঞ্জের কথা বললেন পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2019, 06:32 PM
Updated : 17 August 2019, 07:00 PM

পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানামুখী তৎপরতায় বাংলাদেশ এখন এক্ষেত্রে বিশ্বের কাছে ‘রোল মডেলে’ পরিণত হয়েছে।

“কিন্তু তিনটি বিষয়ের কারণে তা নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হচ্ছে না। একটি হচ্ছে সদস্য সংগ্রহ করা, সেটা ইন্টারনেট ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন মাধ্যমে করছে। দ্বিতীয় ‘রেডিক্যালাইজড’ হচ্ছে যারা, তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তৃতীয় পুনর্বাসন একটি বিষয়, যেটা নানা কারণে হচ্ছে না। অথচ তা প্রয়োজন।”

২০০৫ সালের ১৭ অগাস্ট দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। এই হামলার মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) তাদের অস্তিত্ব জানান দেয়। রাজধানীতে ৩৪টিসহ প্রায় সাড়ে চারশ জায়গায় এসব বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা।

অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান

ওই বোমা হামলা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এই হামলার পর জঙ্গি দমনে কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ঢাকা মহানগর পুলিশে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম নামে একটি ইউনিট গঠন করা হয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে গঠিত হয় এন্টি টেররিজম ইউনিট।

এরপর জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ্যেই ২০১৩ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে মুক্তমনা লেখক, ব্লগার ও ভিন্ন মতাবলম্বীরা আক্রান্ত হতে থাকেন। এরপরে ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান ক্যাফেতে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১৭ জন বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। এরপর টানা জঙ্গিবিরোধী অভিযানে অনেক হতাহতের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত হলেও জঙ্গি তৎপরতা এখনও শেষ হয়নি বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।

অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “জঙ্গিদের নানামুখী তৎপরতা এখনো অব্যাহত আছে। জঙ্গিরা বসে নেই। তারা কোনো না কোনোভাবে তদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের যে কোনো দেশে জঙ্গি তৎপরতা শুরু হলে তা সহজে শেষ হয় না। এটার জন্য প্রয়োজন সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা।”

জঙ্গিবাদ এখন গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য প্রয়োজন গবেষণার, সেই সাথে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের এ নিয়ে কাজ করা দরকার।”

জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও রয়েছে সোচ্চার

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারা দেশে ১৬১টি মামলা হয়। এর মধ্যে প্রায় অর্ধশত মামলা এখনও বিচারাধীন।

কর্মকর্তারা জানান, মোট ১৭টি মামলায় ‘ফাইনাল রিপোর্ট’ দেওয়া হয়। বাকি মামলাগুলোর কোনোটির বিচার কাজ শেষ হয়ে আসামিরা সাজা ভোগ করছে, কোনো মামলার বিচার এখনও চলছে। আবার মামলার অনেক আসামি এখন জামিনেও আছেন।

পুলিশের ভাষ্যমতে, শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলাভাই ওরফে সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে জেএমবি’র তৎপরতা ওই সিরিজ বোমা হামলার আগে থেকেই ছিল। হামলার পর পুলিশ-র‌্যাব তৎপর হয়ে উঠে এবং এই দুজনসহ জেএমবির অনেক অনুসারীকে গ্রেপ্তার করে।

গুলশান হামলাসহ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জঙ্গি তৎপরতার পেছনে কানাডা প্রবাসী তামিম চৌধুরী নেতৃত্বাধীন ‘নয়া জেএমবি’ এবং আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের সম্পৃক্ততার কথা বলে আসছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গুলশান হামলার পর পুলিশি অভিযানে তামিমসহ ওই সংগঠনের অনেকে নিহত হয়েছেন।