সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর নিভল মিরপুরের আগুন, পুড়েছে ‘প্রায় পুরো বস্তি’

ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিটের সাড়ে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় ঢাকার মিরপুরের বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে তার আগে ওই বস্তির দুই হাজারের বেশি ঘরের প্রায় সবগুলোই পুড়ে গেছে বলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2019, 02:02 PM
Updated : 17 August 2019, 07:30 AM

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মিরপুর-৭ নম্বরে রূপনগর থানার পেছনে চলন্তিকা বস্তিতে আগুন লাগে। চলন্তিকা মোড় থেকে রূপনগর আবাসিক এলাকা পর্যন্ত ঝিলের ওপর কাঠের পাটাতন দিয়ে ছোট ছোট ঘর বানিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল বস্তিটি।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা এরশাদ হোসেন জানান, সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। আগুনের ব্যাপকতা দেখে পরে আরও ইউনিট বাড়ানো হয়। শেষ পর্যন্ত ২০টি ইউনিট কাজ করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বস্তিতে দুই থেকে আড়াই হাজার ঘর ছিল।

“প্রায় সব ঘরই পুড়ে গেছে।”

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম জানান, আগুনের ঘটনায় চারজন আহত হয়েছেন। তারা হলেন কবির (৩৫), হাবিব (১৯), রফিক ও শরীফ।

এই বস্তিতে কয়েক হাজার পরিবারের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করতেন বলে এলাকাবাসীর ধারণা।

৫০০-৬০০ বস্তিঘর পুড়ে ৩০০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বাসিন্দার সংখ্যা সম্পর্কে কোনো ধারণা দিতে পারেননি কর্মকর্তারা।

শাহদাত হোসেন নামে একজন বস্তিবাসী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সন্ধ্যার পর বস্তির মাঝামাঝি এলাকা থেকে আগুনের সূত্রপাত। প্রথম দিকেই আগুনে তার ঘরটি পুড়ে যায়।

ঘটনাস্থল থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোকচিত্রী আসিফ মাহমুদ অভি জানান, ঈদের ছুটি থাকার কারণে বস্তির অনেক বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন বলে কয়েকজন তাকে জানিয়েছেন।

“অধিকাংশ ঘর তালাবন্ধ থাকায় আগুনে সব কিছু পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়। আসবাব রক্ষার তৎপরতাও দেখা যায়নি।”

দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার আশ্বাস দেন।

আগুনে গৃহহীনদের স্থানীয় পাঁচটি স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করার কথা জানান তারা।

আগুন ছড়িয়ে বস্তির পশ্চিম পাশের একটি মসজিদ ভবনে লাগে। আল আরাবিয়া নামে চারতলা ওই মসজিদ ভবনের নিচ তলায় মার্কেট, দ্বিতীয় তলা থেকে মসজিদ। ভবনের নিচ তলায় আগুন লেগে কয়েকটি সবজির দোকান পুড়ে যায়।

মসজিদের পাশে একটি বহুতল ভবন, বিজিএমইএর একটি হাসপাতাল এবং কয়েকটি পোশাক কারখানা রয়েছে।
আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই পোশাক কারখানায় ছুটি দেওয়া হয় বলে এলাকাবাসী জানান।

বস্তির কয়েকজন বাসিন্দা বলেছেন, অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়া হয়েছিল বস্তিতে। বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে আগুন লেগে অরক্ষিত গ্যাসের সংযোগের সংস্পর্শে গিয়ে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলে তাদের ধারণা।

বস্তিতে গ্যাসের লাইনগুলো ছিলো প্লাস্টিকের, যা দ্রুত আগুন ছড়ায় বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ড তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।