শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বিশ্ব একাদশ।
Published : 16 Aug 2019, 12:37 AM
উস্টারশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট মাঠে বৃহস্পতিবার এই খেলা হয়। পাঁচ জাতির টুর্নামেন্টের পর এই প্রীতি ম্যাচের আয়োজন ছিল।
এতে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী বাকি চার দেশের সমন্বিত দল। এই দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান।
টসে জিতে ইংল্যান্ড দল ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ইংল্যান্ডের দুই ব্যাটসম্যান অ্যাঙ্গাস ব্রাউন ও জেমি গুডউইনের জুটি দারুণভাবে খেলা শুরু করেন।
শত রানের এই জুটি ভাঙে ১১ ওভার ৫ বলে, গুডউইন ক্যাচ আউট হওয়ার মাধ্যমে। যাওয়ার আগে তিনি ৩৭ বল খেলে সংগ্রহ করেন ৫৮ রান।
এরপর রান সংগ্রহের গতিতে কিছুটা ভাটা নামে ইংল্যান্ডের। এ সময় আউট হওয়া তিন ব্যাটসম্যানের কেউই ব্যাট হাতে তেমন একটা থিতু হতে পারেননি। তবে ব্রাউন টিকে ছিলেন শেষ পর্যন্ত। ১৮ ওভারের সময় ডাব্লিউ ফ্লিনের আউট হওয়ার পর খেলতে নামা লেয়ার্ড ব্যাটে বলের দারুণ সংযোগ ঘটান। তিনি ৮ বল খেলে ১৬ রান সংগ্রহ করেন।
শেষ পর্যন্ত চার উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৬২ রান।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৫ ওভার ৩ বলে ৫ ইউকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বিশ্ব একাদশ। বিশ্ব একাদশের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান আফগানিস্তানের এ কে কারিমি মারকুটে ব্যাট চালাতে থাকেন। ষষ্ঠ ওভারের তৃতীয় বলে আউট হওয়ার আগে তিনি ১৯ বলে ৪০ রান তোলেন।
আরেক আফগান ব্যাটসম্যান আহমেদজাই ২৫ বল খেলে ৩১ রান সংগ্রহ করেন। বিশ্ব একাদশের পক্ষে ভারতীয় খেলোয়াড় সুগনেশ মাহেন্দ্র ২৩ বলে ৩৫ রান করেন। পাকিস্তানি খেলোয়াড় হামিদ ১০ বলে ১৫ রান এবং আফগান খেলোয়াড় তোফায়েল ১২ বলে ৩৫ রান করেন। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ কাজল হোসেন খেলতে নেমে ৩ বলে ২ রান করেন।
সব মিলিয়ে ১৫ ওভার তিন বলেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বিশ্ব একাদশ।
বিশ্ব একাদশের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ দলের ডেপুটি কোচ মো. মনিরুজ্জামান মনি।
খেলার পর তিনি মনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবারের শারীরিক প্রতিবন্ধীদের এই ক্রিকেট এতটাই উন্নত হয়েছে যে, এখানে অংশগ্রহণকারী যে কোনো দলই যে কোনো দেশের প্রথম বিভাগের দলগুলোকে হারাতে সক্ষম। আর বিশ্ব একাদশের এই টিমটি প্রথম শ্রেণির যে কোনো টি-টোয়েন্টি দলকে হারানোর ক্ষমতা রাখে।”
ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের আয়োজনে এবারের এই টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়।
এটি পাঁচ জাতি টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসর। এর আগে ২০১৫ সালে ঢাকায় বসে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। তাতেও এই পাঁচ দেশই অংশ নেয়।
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালে। ওই বছর রেডক্রস পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন নিয়ে কাজ করা সিআরপিকে (সেন্টার ফর দ্যরিহ্যাবিলেটেশন অফ দ্য প্যারালাইজড) একটি ক্রিকেট দল গড়তে সহায়তা দেয়। একই বছর প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজনকরে রেডক্রস।
এছাড়া সিআরপির প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দল ওই বছরের ১৭ থেকে ২০ মার্চ ভারতের ডিজ্যাবলড স্পোর্টিং সোসাইটি (ডিএসএস) দলের বিরুদ্ধে তিন দিনেরএকটি টুর্নামেন্টে অংশ নেয়।
২০১৪ সালে সিআরপির পাশাপাশি বাংলাদেশ ফিজিকালি চ্যালেঞ্জড ডিজ্যাবলড অ্যাসোসিয়েশন ও ফিজিকালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করে।
পরে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় বিকেএসপি, প্যারা অলিম্পিকস, স্পেশাল অলিম্পিকস ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং ব্রিটিশ হাই কমিশন ও ইংল্যান্ড অ্যান্ডওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড।
পরের বছর মার্চে রেডক্রসের সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো ‘ট্যালেন্ট হান্ট ক্যাম্প’ হয়।
২০১৬ সালে দুবাইয়ে আরেকটি টুর্নামেন্টের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল। সেখানেও বাংলাদেশ দলকে সহযোগিতা দেয় আইসিআরসি।ওই টুর্নামেন্টের আগে দ্বিতীয় প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি হয়। এরপর ২০১৭ সালে তৃতীয় ‘প্রতিভা অন্বেষণ’ হয়।
২০১৮ সালে ইসিবির আমন্ত্রণে ইংল্যান্ডে আরেকটি ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে আসে বাংলাদেশ দল।
বাংলাদেশে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্রিকেটে অনেকে যুক্ত হলেও এই দলটির মূল পৃষ্ঠপোষকতা আসে আইসিআরসি থেকেই। অন্য দেশগুলোতে বোর্ডের আরো নিবিড় তত্ত্বাবধান থাকলেও বাংলাদেশে সেটি নেই।
ফলে এ সব দেশ যে গতিতে সামনে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে তাল মেলাতে পারছে না বাংলাদেশ টিম।
এবারের আসরে ভারত প্রথম থেকে কেবল দৃষ্টিনন্দন ক্রিকেটই খেলেনি। তাদের শরীরি ভাষাও বদলে গিয়েছিল। এক বছর আগে ভারতের মুখোমুখি হওয়া বাংলাদেশি খেলোয়াড়দেরকেও বিস্ময় প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
বছরজুড়ে লীগসহ বিভিন্ন খেলায় ব্যস্ত ছিল বাকিগুলোও। অন্যদিকে বাংলাদেশের এই দলটির সর্বশেষ খেলা ছিল গত বছরের ইংল্যান্ড সফর। এরপরএবারের ক্যাম্প হওয়ার আগের সময়টা তাদের কেটেছে নিরবে-নিভৃতে।