কোরবানির পশুর ট্রাক ছিনতাইয়ের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে

কোরবানির ঈদের আগে ছাগলবোঝাই একটি ট্রাক ছিনতাই করে ৫ বেপারীকে ১৩ ঘণ্টা জিম্মি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2019, 06:12 PM
Updated : 20 August 2019, 12:00 PM

অভিযোগ পাওয়ার পর তিনজনকে গ্রেপ্তার এবং তাদের কাছ থেকে পাঁচটি ওয়াকিটকি উদ্ধার করেছে র‌্যাব। এই ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় দুটি মামলাও হয়েছে।

র‌্যাব-২ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, টেলিফোনে ছাগলবোঝাই ট্রাক ছিনতাইয়ের খবর পাওয়ার পর বাবর রোডের জহুরী মহল্লায় গিয়ে ২১২টি ছাগলসহ ট্রাকটি পান তারা।

সেখানে ইয়াসিত আরাফাত (২৮), জাহিদুল ইসলাম (২৯) ও মো. রায়হান (২৭) নামে তিনজনকে ৫টি ওয়াকিটকিসহ গ্রেপ্তার করা হলেও অন্যরা পালিয়ে যায় বলে জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা।

পালিয়ে যাওয়ার মধ্যে ছাত্রলীগের মোহাম্মদপুরে থানা সভাপতি মুজাহিদ আজমি তান্না ছিলেন বলে থানায় দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

তবে তান্না অভিযোগ অস্বীকার করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুরো বিষয়টি ‘সাজানো’।

তবে গ্রেপ্তার তিনজন ছাত্রলীগকর্মী বলে জানান তিনি।

একটি মামলার বাদী সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সেদিন ৯৯৯ ফোন করেও পুলিশের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। প্রায় ১৩ ঘণ্টা বেপারীরা জিম্মি থাকার পর র‌্যাব গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।

শরীয়তপুরের ছাগল ব্যবসায়ী সাইফুল বলেন, ঢাকায় যাত্রাবাড়ি ছাগলের আড়তে আসার জন্য পাঁচজন বেপারি ঝিনাইদহ থেকে ২১২টি ছাগল ট্রাকে নিয়ে গত ১০ অগাস্ট বিকালে রওনা হন। ঢাকায় ঢোকার পর রাত ১২টার দিকে গণভবনের সামনে ট্রাকটি যানজটে আটকা পড়লে হঠাৎ করে চারটি মটর সাইকেলে আসা ৭-৮জন যুবক লাঠি সোঁটা নিয়ে সেখানে আসে। তারা ট্রাকের মধ্যে উঠে সবাইকে জিম্মি করে। পরে জহুরী মহল্লার একটি ক্লাব ঘরে নিয়ে যায় ট্রাকটি।

মামলায় সাইফুল অভিযোগ করেন, সেই ক্লাব ঘরে নিয়ে বেপারীদের আটকে কয়েকজন যুবক অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছাগল বিক্রি থেকে প্রতি হাজারে ৫০ টাকা করে দাবি করে।

তিনি বলেন, “রাত ৩টার দিকে খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখি, ১৫-১৬ জন আমার বেপারিদের জিম্মি করে রেখেছে। তাদের ছেড়ে দিতে বললে তারা আমাকে মারধর করে ওয়াকিটকি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কথা বলার অভিনয় করে ভয়ভীতি দেখায়। এভাবেই রাত পার হয়ে যায়।”

সাইফুল বলেন, পরদিন বেলা ১টায় বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে ফোন করে তার ভগ্নিপতিকে তিনি ঘটনাটি জানান, তখন র‌্যাব-২কে ঘটনাটি জানানো হয়।

মামলায় বলা হয়েছে, বেপারীদের যারা জিম্মি করে রেখেছিল তারা পরস্পরকে মুজাহিদ আজমী তান্না, জসিম, রাতুল, তানভীর, হীরা, তনয়, পারভেজ নাম ধরে ডাকাডাকি করেছিল।

র‌্যাব কর্মকর্তা আশিক বিল্লাহ জানান, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে ছাত্রলীগ নেতা তান্না বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তারা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।”

এক প্রশ্নের জবাবে তান্না জানান, তাদের কাছ থেকে যে ওয়াকিটকি পাওয়া গেছে, সেগুলো ডেঙ্গু সচেতনতার জন্য ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে যে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তাতে ব্যবহারের জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছিল।

এই ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় অপহরণ, চাঁদাদাবি, জিম্মি, সরকারি কর্মচারীদের প্রতীক ব্যবহার করার অভিযোগে সাইফুল যে মামলাটি করেছেন, সেখানে তান্নাকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে র‌্যাব কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসেনের করা আরেকটি মামলায় চার নম্বর আসামি করা হয়েছে তান্নাকে।

সাইফুল জানান, ‌র‌্যাবের হস্তক্ষেপে মুক্ত হতে পারলেও দীর্ঘ সময় জিম্মি থাকার কারণে তারা সব ছাগল বিক্রি করতে পারেননি। এতে তাদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। আর শারীরিক নির্যাতনেও তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।