এই ছয়জন হলেন খন্দকার আবদুর রশিদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান।
পলাতক এই ছয়জনের বিষয়ে ইন্টারপোল থেকে রেড নোটিস জারি করা আছে। ২০০৯ সালে এই নোটিস জারির পর প্রতি পাঁচ বছর পরপর নবায়ন করা হচ্ছে।
এই ছয়জনের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীর অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)’র সহকারী মহাপুলিশ পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা মহিউল ইসলাম।
তিনি বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, নূর চৌধুরীর কানাডায় এবং রাশেদ চৌধুরীর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকিদের অবস্থান কোথায়, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
নূর চৌধুরী কানাডায় থাকলেও ফাঁসির আসামি বলে তাকে ফেরত দিতে অনীহা দেখিয়ে আসছে দেশটির সরকার; যদিও তাকে ফেরত পেতে বারবার দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।
রাশেদ চৌধুরীর ক্ষেত্রেও কোনো অগ্রগতি নেই। বাংলাদেশ তাকে ফেরত চাইলেও যুক্তরাষ্ট্র তা এড়িয়ে যাচ্ছে বারবার।
সম্প্রতি থাইল্যান্ডে এক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে বলেন রাশেদ চৌধুরীর বিষয়ে কোনো প্রশ্ন না করতে।
মোমেনের ভাষ্য অনুযায়ী, তখন পম্পেও উল্টো জানতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশ কাকে চায় রাশেদ চৌধুরী না কি ডেভিড ওয়াটসনকে। অর্থাৎ রাশেদ চৌধুরী নাম পাল্টেও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে থাকতে পারেন।
মাজেদ ও মোসলেম উদ্দিনের ব্যাপারে এনসিবি’র কর্মকর্তা মহিউল জানান, সর্বশেষ এই দুজনের অবস্থান ভারত ও পাকিস্তানে বলে শোনা যাচ্ছিল। তখন দুই দেশকে চিঠিও দেওয়া হয়।
“ভারত জবাবে বলেছে, তাদের দেশে নেই। পাকিস্তান কোনো জবাব না দেওয়ায় রিমাইন্ডার দেওয়ার পরও কোনো উত্তর মেলেনি। ফলে তাদের অবস্থান এখনও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।”
রশিদ ও ডালিমের অবস্থানের বিষয়েও স্পষষ্ট তথ্য নেই।
মহিউল বলেন, “রশিদের ব্যাপারে সম্ভাব্য যে সব দেশের নাম শোনা যাচ্ছে, তা হচ্ছে ফ্রান্স, ইতালি, লিবিয়া, পোল্যান্ড, থাইল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। আর ডালিম চীন, ইংল্যান্ড, হংকং, কেনিয়া, লিবিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে কোনো এক দেশে আছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে।”
প্রতিটি দেশে চিঠি পাঠিয়ে সহযোগিতা চাওয়া হলেও তার কোনো জবাব এখনও মেলেনি বলে জানান এই কর্মকর্তা।
মহিউল বলেন, ইন্টারপোল সব ধরনের সহযোগিতা করছে। এই পলাতকরা তাদের বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে এক দেশে থেকে অন্য দেশে যে কোনো বন্দর দিয়ে যেতে চাইলে তাকে সংশ্লিষ্ট দেশের বন্দর কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তার করবে, এই ব্যবস্থাও করা আছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীকে সামনে রেখে পলাতক খুনিদের দুই-একজনকে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকরের আশাবাদ প্রকাশ করে আসছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
তবে এক্ষেত্রে জটিলতার দিকটি দেখিয়ে তিনি বলেছিলেন, পঁচাত্তরের ট্রাজেডির পর ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া এই খুনিরা দেশ ছাড়ার সময় একাধিক পাসপোর্ট করেছিলেন।
জাতির জনকের খুনিদের ফেরাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেছিলেন, কোনো খুনির বাসার সামনে প্রবাসীরা বিক্ষোভ করলে সে দেশের সরকারও চাপের মধ্যে থাকবে।
এই ছয়জনের পাশাপাশি আরও এক খুনিও বাংলাদেশের খাতায় পলাতক। তবে সেই আজিজ পাশা ২০০১ সালে জিম্বাবুয়েতে মারা যান বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে একদল সেনা সদস্য। তারপর বিচারের পথও রুদ্ধ করে দেওয়া হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিচারের পথ খোলে; মামলার পর বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর ফের শ্লথ হয়ে যায় মামলার গতি।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দণ্ডিত পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয় সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি)।
এরপর থেকে পলাতক খুনিদের অবস্থান শনাক্ত করে দেশে ফেরানোর চেষ্টা চললেও তারা এখনও অধরাই রয়ে গেছেন।