তবে বিনোদনকেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে দর্শানার্থীর সংখ্যায় এবার বেশ কম; গত ঈদের তুলনায় অর্ধেকের মতো।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীর মিরপুর চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, হাতিরঝিলে ভিড় করা শুরু করেন তারা।
মিরপুর চিড়িয়াখানার টিকেটম্যান আলম জানান, সকাল ৮টায় চিড়িয়াখানার ফটক খোলার পর ১৫ মিনিটের বৃষ্টির কারণে দর্শনার্থীর সংখ্যা কমে যায়। পরে দর্শনার্থীদের সংখ্যা খানিকটা বাড়তে থাকে।
বিকেল ৩টার দিকে বানর, বাঘের খাঁচা ঘিরে দর্শনার্থীদের বড় জটলা দেখা গেল। বাঘকে কাছে পেয়ে ভয় ও উচ্ছ্বাসের মিশ্র অনুভূতির ছাপ আট বছরের শিশু নাভিদ পারভেজের। বাবার মুঠোফোন ‘টগর’ নামে সেই বাঘের ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে উঠে সে; খানিক বাদে বাঘের হুংকার শুনে আশ্রয় নেয় মায়ের কোলে।
রামপুরার বাসিন্দা তার ব্যাংকার বাবা নাসিম পারভেজ বলেন, এবারই প্রথম চিড়িয়াখানায় এসেছে ছেলে। অনেকদিন ধরেই বায়না করলেও সময়ের অভাবে সেই আবদার পূরণ করতে পারেননি।
পরে বানর, পাখি, ভালুক আর জিরাফ দর্শন শেষে চিড়িয়াখানার দোলনায় চেপে বসে নাভিদ; তার মতো অনেক শিশুই দোলনায় চেপে নিজেদের আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে।
চিড়িয়াখানার কিউরেটর এসএম নজরুল ইসলাম জানান, গত মাসে আফ্রিকা থেকে নতুন দুটি বাঘ ও দুটি বাঘিনী আনা হয়েছে। বাঘদুটির নাম টগর ও কদম; বাঘিনী দুটির নাম বেলি ও শিউলি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, অন্যান্য ঈদের তুলনায় এবার ঈদে দর্শনার্থীদের ভিড় কম।
চিড়িয়াখানার ইজারাদার প্রতিষ্ঠান শিখা ট্রেডার্সের সত্বাধিকারি বিমল চন্দ্র মণ্ডল টিকিট বিক্রি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “ঈদের দিন যে টিকিট বিক্রি হয়েছে সেটা এমনি সাধারণ দিনেও বিক্রি হয়। আজ কিছুটা বাড়লেও ঈদ হিসেবে এটা কিছুই না। আবহাওয়া ভালো থাকলে হয়তো দর্শনার্থী আরও বাড়ত।”
ঈদ ঘিরে চিড়িয়াখানাসহ অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে পর্যটন পুলিশের পরিদর্শক কাওসার আলী।
তিনি বলেন, “ডিএমপি পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশের চার জন সদস্য আমরা চিড়িয়াখানায় দায়িত্বে আছি। জনগণের নিরাপত্তা দিতে আমরা সব সময়ই বদ্ধপরিকর।”
দুই সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে এসেছে বেসরকারি চাকরিজীবি আদনান আহমেদ। তিনি বলেন, “ঢাকা শহর তো যান্ত্রিক হয়ে গিয়েছে; একটু প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা নেই। ছুটির দিনে পুরো পরিবার নিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটাতে এসেছি।”
চিড়িয়াখানার মতো বোটানিক্যাল গার্ডেনেও খুব একটা ভিড় ছিল না। ফলে টিকেট বিক্রির হার অনেক কম বলে জানালেন টিকেটম্যান ইদ্রিস খান।
তিনি বলেন, “আমাদের চারটি টিকিট কাউন্টার; দর্শনার্থী কমে যেতে যেতে সেখান থেকে আজ মাত্র একটি কাউন্টার চালু আছে। আগে ঈদের সময় চার জন টিকেট কেটেও দম ফেলানো যেত না।”
ঢাকায় এখন বিনোদন কেন্দ্র হওয়ার কারণে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দর্শনার্থী কমে গেছে বলে ধারণা তার; দর্শনার্থীরা বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ছড়িয়ে ছটিয়ে যাচ্ছে।
রাজধানীন অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হাতিরঝিলে পড়ন্ত বিকেলে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে; বৃষ্টি মাথায় ওয়াটার বোটে চেপে সময় কাটান দর্শনার্থীরা।
বৃষ্টির কারণে যমুনা ফিউচার পার্কের আউটডোর রাইড কার্নিভালে দর্শনার্থীর সংখ্যা কম থাকলেও ইনডোর ফিউচার ওয়ার্ল্ডে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল বলে জানান পার্কের ব্যবস্থাপক মাহবুব আলম।
ঈদে ঢাকার প্রেক্ষাগৃহগুলোতেও বেশ ভিড় ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এবার ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ ও ‘বেপরোয়া’ নামে দুটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে ঢাকায়।
যমুনা ফিউচার পার্কে দুটি চলচ্চিত্রই প্রদর্শিত হচ্ছে জানিয়ে মাহবুব বলেন, “সিনেমা হলে ক্রাউড ভালো যাচ্ছে। ‘বেপরোয়া’র চেয়ে ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ ছবিটি বেশি চলছে।”
ব্লকবাস্টারের পাশাপাশি স্টার সিনেপ্লেক্স, বলাকা সিনেওয়ার্ল্ড, শ্যামলী সিনেমাতেও দর্শকদের ভিড় ছিল বলে জানিয়েছে হলগুলোর ব্যবস্থাপকরা।
সিনেমা হলগুলো সরব থাকলেও জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে কোনো মঞ্চনাটকের প্রদর্শন হয়নি মঙ্গলবার; ঈদের জন্য বুধবার পর্যন্ত মিলনায়তনগুলোর অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।