যত্রতত্র পশু জবাই চললে আইনি ব্যবস্থা: মেয়র আতিকুল

দূষণ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানির আহ্বানে নগরবাসীর সাড়া না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2019, 02:32 PM
Updated : 13 August 2019, 02:32 PM

তিনি বলেছেন, আগামীতে যত্রতত্র পশু জবাই ও বর্জ্য ফেলে রাখলে নগর কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

অবশ্য কোন আইনে কী ধরনের ব্যবস্থা সিটি করপোরেশন নেবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি মেয়র।

এবার ঈদুল আযহায় রাজধানীতে প্রায় পাঁচ লাখ পশু কোরবানির জন্য দুই সিটিতে ৮৭৫টি স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এ বছর মহাখালী পশু জবাইখানাসহ ২৭৩টি স্থানে পশু কোরবানির ব্যবস্থা করে। এছাড়া কোরবানি করা যাবে এ রকম ৪০০টি স্থান চিহ্নিত করে দেয়।

আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবার ৬০২টি স্থান পশু কোরবানির জন্য নির্ধারণ করে দেয়।রাস্তার ওপর কিংবা ড্রেনের পাশে পশু জবাই না করার জন্য বিশেষ সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নেয় দুই সিটিই।

কিন্তু সোমবার ঈদের দিন নাগরিকরা নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি দিতে আগ্রহ দেখাননি খুব একটা।

সকাল থেকে রাজধানীর অলিতে গলিতে, এমনকি প্রধান সড়কের ওপর পশু কোরবানি দিতে এবং মাংস কাটতে দেখা যায় বরাবরের মতই। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় বাড়তে থাকে রক্তমেশা পানি আর বর্জ্যের স্তূপ।

এ কারণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আশানুরূপ গতি পায়নি জানিয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আতিক বলেন, “পশু কোরবানির স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নগরবাসীর অনেকে সেখানে আসেননি। অনেকে সড়কেও কোরবানি দিয়েছেন।

“এটা দুঃখজনক। তারা যদি সেখানে এসে কোরবানি দিতেন, তাহলে আমরা দ্রুত বর্জ্য সংগ্রহ করে তা অপসারণ করতে পারতাম।”

মেয়র বলেন, “আগামীতে কেউ যদি যদি যত্রতত্র পশু কোরবানি দেন, তাহলে ডিএনসিসি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।”

তিনি জানান, এবার ঢাকা উত্তরে আড়াই লাখেরও বেশি পশু কোরবানি হয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক পশুর বর্জ্য অপসারণ করতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪৩৮টি বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছে।

সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে কোরবানি না দেওয়ার কারণ হিসেবে নগরবাসী বলছে, নিজের বাসা থেকে বহু দূরে গিয়ে তারা কোরবানি দিতে চান না। অনেকে বলেছেন, নির্ধারিত স্থানে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, কসাই ও হুজুর নেই।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এবার পশু কোরবানির জন্য ১০০ জন ইমাম এবং ২০০ জন মাংস প্রস্তুতকারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বাড়িতে মাংস পৌঁছে দেওয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। 

তারপরও এ সিটিতে নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানির হার ২০ শতাংশও হবে না বলে প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মঞ্জুর হোসেনের ধারণা।

এমনকি ঢাকার দুই মেয়র আতিকুল ইসলাম ও সাঈদ খোকনও নিজেদের বাড়িতেই পশু কোরবানি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুই সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তারা।

মেয়র সাঈদ খোকন মঙ্গলবার নগর ভবনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বিভিন্ন কারণে মানুষ তার বাসায় এবং আঙিনায় কোরবানি দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। অল্প সংখ্যক নাগরিক আছেন, তারা নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি দিচ্ছেন।

“আশা করি আগামীতে আরও বেশি করে আমাদের সম্মানিত নাগরিক নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি দেবেন।”

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের এবার রাজধানীতে ২৩টি অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমোদন দিয়েছিল। ইজারাদাররা নিজস্ব উদ্যোগে হাট থেকে পশুর বর্জ্য অপসারণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তা করেননি বলে সাংবাদিকদের জানান মেয়র আতিকুল ইসলাম।

ইজারাদারদের এই গাফিলতির জন্যও আগামীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন মেয়র সাঈদ খোকন।

তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ইজারা দেওয়া ১৭টি হাটের মধ্যে ১৪টি হাটের বর্জ্য মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে অপসারণ করা গেছে।

“তবে এই ১৪টি হাটের মধ্যে বেশ কয়েকটি হাটে এখনো পুঁতে রাখা বাঁশ রয়েছে। ইজারাদারদের অসহযোগিতার কারণে বর্জ্য অপসারণ সম্পন্ন করা যায়নি। এজন্য আমাদের একটু বেগ পেতে হচ্ছে।

“তিনটি হাটের মধ্যে আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি এখনো চলমান রয়েছে। এগুলো হলো কমলাপুর, মেরাদিয়া এবং শনির আখড়া।”

আগামীতে পশুর হাটের বর্জ্য অপসারণে এমন অবহেলা দেখলে ইজারাদারদের জামানত বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান মেয়র সাঈদ খোকন।

উত্তরের মেয়রও এই অবহেলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।

তিনি বলেছেন, আগামীতে যত্রতত্র কোরবানি করা থেকে নগরবাসীকে বিরত রাখতে উদ্ভাবনী প্রচারাভিযান চালাবে ডিএনসিসি।

নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানিতে নগরবাসীকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি ‘আরো আধুনিক উপায়ে’ পশু কোরবানির বন্দোবস্ত করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন আতিক।

তিনি বলেন, “বেঙ্গল মিটের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আগামীতে আমরা পশু কোরবানিতে নতুন প্রযুক্তি… মেকানিক্যাল প্রযুক্তি নিয়ে আসতে চাই।”

এ বছর কোরবানির পশুর বর্জ্য রাখার জন্য উত্তর সিটি করপোরেশন কিছু পচনশীল ব্যাগ সরবরাহ করেছিল। আগামীতে সেই ব্যাগ সরবরাহের পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি। 

এছাড়া বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনার কথাও তিনি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন।