বিশেষ করে রাজধানীর প্রধান দুটি টার্মিনাল- মহাখালী ও গাবতলীতে বাসের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। এই দুই টার্মিনাল থেকে মূলত উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম জনপদের গাড়িগুলো চলাচল করে।
বিভিন্ন বাস কোম্পানির কর্মীরা বলছেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো যানজটে পড়ায় গন্তব্যে পৌঁছাতেই কয়েক ঘণ্টা দেরি হচ্ছে। ফলে ফিরতি পথে যানজট না থাকলেও সেসব বাস ঢাকায় আসতে সময় লাগছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টাঙ্গাইলের পাকুল্লা পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার জুড়ে তীব্র যানজটের খবর পাওয়া গেছে। একই খবর দিয়েছেন নীলফামারী প্রতিনিধি।
শনিবার সকালে মহাখালী টার্মিনালে কথা হয় ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কৃষক সমাজের নেতা মানবেন্দ্র দেবের সঙ্গে।
এ বিষয়ে বগুড়াগামী এসআর ট্রাভেলসের কাউন্টার মাস্টারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাস রাস্তায় আছে, বেশি সময় লাগবে না, কাছাকাছি চলে এসেছে।”
গাবতলী বাস টার্মিনালেও একই চিত্র দেখা গেছে।
এখানে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বাসের অপেক্ষায় ৬ ঘণ্টা পার করেছেন একটি বিমা কোম্পানির কর্মকর্তা ফারুক আহম্মেদ রাজু।
“সকাল আটটায় বাস ছাড়ার কথা এখনও বাসের কোনো খবর নেই। একবার বলে মানিকগঞ্জ আসছে, আবার বলে সাভারে আসছে। দেখি কখন আসে।”
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জননী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার বলেন, “বাস আসলে তো দেখতেই পাবেন।”
বাস কখন আসবে জানতে চাইলে গাবতলীর সোহাগ পরিবহনের পরিচালক কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
টার্মিনালগুলোর বাইরে বিভিন্ন কোম্পানির কাউন্টারেও যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে।
টেকনিক্যাল মোড়ে শাজাহাদপুর ট্রাভেলসের যাত্রী ঢাকার আইইউবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাকিবুল হাসান বলেন, “প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে বাসের অপেক্ষায় আছি। সকাল সাড়ে নয়টায় বাস ছাড়ার কথা।”
একই জায়গায় শ্যামলী পরিবহনের বাস কাউন্টারকর্মী কৃষ্ণ কোমল সরকার জানান, তাদের বাস বেশি থাকায় যাত্রীরা পাচ্ছে।
“তবে দুই-তিন ঘণ্টা দেরি হচ্ছে, এটা মূলত যানজটের কারণে।”
নীলফামারী প্রতিনিধির পাঠানো খবরে উত্তরের পথে যানজটের খবরের সত্যতাও পাওয়া গেছে।
শুক্রবার সকাল সাত টায় ঢাকার মীরপুর মাজার রোড থেকে নাবিল পরিবহনের বাসে পরিবার নিয়ে রওনা হয়েছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী এমদাদুল হক। আট ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে তার লেগেছে ২৪ ঘণ্টা।
তিনি বলেন, “পথে গতি নেই। ঢাকা থেকে বের হয়ে টাঙ্গাইলে এসে থেমে যাচ্ছে বাস। আনন্দের এ যাত্রায় পথটি পরিণত হয়েছে যন্ত্রণায়।”
কাউন্টার খোলা কিন্তু টিকেট কালোবাজারিতে
বেলা ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মহাখালী বাস টার্মিনালে সিরাজগঞ্জগামী এসআই এন্টারপ্রাইজ, অভি এন্টারপ্রাইজ ও সেবা লাইনের সব কাউন্টার খোলা থাকলেও টিকেট বিক্রির লোক নেই। অথচ যাত্রীরা দাঁড়িয়ে আছেন লাইনে।
যাত্রীদের অভিযোগ, এই তিন কোম্পানির টিকেট কালোবাজারিতে বিক্রি করার বিষয়টি গণমাধ্যমে আসায় আজকে কাউন্টার খোলা রাখলেও কাউন্টার থেকে টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে না।
ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রোগ্রামার আশরাফুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল ১০টায় এসেছি, এখনও কোনো টিকেট পাচ্ছি না। কাউন্টার খোলা দেখছি, কিন্তু টিকেট বিক্রি হচ্ছে না।
“আমি লাইনে দাঁড়ানোর পর ২৫০ টাকার টিকেট ৮০০ টাকায় বিক্রি শুরু করেছিল। মালিক সমিতির লোকজন এসে বাঁধা দিলে তারা আবার বিক্রি বন্ধ করে চলে যায়। এখন আমরা বিপাকে পড়েছি।”
একই অভিযোগ করেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা মনোয়ারুল ইসলাম।
“সকাল আটটায় এসেছি, টিকেট পাচ্ছি না। কিছু টিকেট তারা বিক্রি করে, আবার মালিক সমিতির লোক এলে বাস নাই বলে বিক্রি বন্ধ করে দেয়। এই খেলাই সকাল থেকে দেখছি।”
সিরাজগঞ্জের টিকেটের জন্য সকাল ৯টায় তিন সন্তানকে নিয়ে টার্মিনালে এসেছেন আসমা আক্তার। তিনি বলেন, “বাচ্চাদের নিয়ে অনেক কষ্ট হচ্ছে। ১২টা বাজতেছে এখনও টিকেট পাইনি। কিভাবে বাড়ি যাব। ওদের বাবা ছুটি পায়নি। সিরাজগঞ্জের বাসের কাউন্টার খোলা আছে, কিন্তু কোনো লোক দেখছি না।”
ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাড়া বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা সার্বক্ষণিক তদারকি করছি।”
কাউন্টার খোলা রেখে বাইরে টিকেট বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা আমার জানা নেই, আমি খবর নিচ্ছি।”